মেঘের দেশে একদিন
একুশে সংবাদ : ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে জনপ্রিয় একটি জায়গার নাম সাজেক ভ্যালী ।সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা,দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু,পূর্বে ভারতের মিজোরাম,পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা।
সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে অনেকটা সহজ।রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায়।খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার।আর দীঘিনালা থেকে ৪৪.৪ কি.মি।
যেভাবে যাবেন :
সাজেক যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে চলে যেতে হবে খাগড়াছড়ি শহরে।কারন সাজেকের অবস্থান রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি শহর থেকেই সেখানে যাওয়া সবচেয়ে সহজ । ঢাকা থেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া নিবে ৬২০ টাকা ও ১৫০০ টাকা (এসি) । শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা যায় । এছাড়া সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় । এবার খাগরাছড়ি থেকে চান্দের গাড়ীতে করে আপনাকে যেতে হবে সাজেকে । দুই দিনের জন্য ভাড়া করলে আপনাকে গুনতে হবে ৭০০০-৯০০০ টাকা । আর এক দিনের জন্য ৬৫০০ টাকা ।
সাজেক যাওয়ার পথে দীঘিনালা নেমে আধাঁ ঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে। সাথে সেরে নিতে পারেন গোসলটাও।
খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহীনিদের সাথে সাজেক যেতে হবে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ঐ সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। নইলে একবার সকালের এসকোর্ট মিস করলে আবার এসকোর্টে পেতে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল তিনটা পর্যন্ত।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে মোট সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাধরে চলা এই ছোট জার্নিটি সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ।
সাজেক ট্যুরে আমরা কি কি দেখবঃ
সাজেকের প্রধান আকর্ষণ হল কংলাক পাহাড়।সাজেক এর শেষ গ্রাম কংলক পাড়া। এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে।
সাজেকে রয়েছে ২ টি হ্যালিপ্যাড ।যেখান থেকে সূর্যাস্ত- সূর্যদয় দেখা যায়।
সাজেক এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণাটি। কমলক ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত।
সাজেক থেকে ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন।
খাগড়াছড়ি শহরের আশেপাশে আরও ঘুরে দেখতে পারেন , আলুটিলা গুহা, তারেং হ্যালিপ্যাড, রিসাং ঝর্না , ঝুলন্ত সেতু।
সাজেকে থাকা খাওয়াঃ
সাজেকে পৌছাতে পৌছাতে দুপুর একটার মত বেজে যায় তাই পৌঁছানোর সাথে সাথে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে রাতে থাকার কটেজ। বিভিন্ন দামের ও মানের কটেজের অভাব নেই সাজেকে।
হানিমুনে গেলে যেমন আলিসান কটেজে থাকতে পারবেন আবার খরচ কমাতে চাইলে ভাল মানের সাশ্রয়ী কটেজেরও অভাব নেই। জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা অবধি কটেজগুলোর এক রাতের খরচ।
সাজেকের বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন মানের রিসাের্ট ও কটেজ রয়েছ। তার ভিতরে উল্লেখযোগ্য কিছু কটেজ হলো:
মেঘ মাচাং: সুন্দর ভিউ ও তুলনামূলক কম খরচে থাকার জন্য মেঘ মাচাং রিসাের্ট অনেকের পছন্দ । আছে খাওয়া দাওয়ারও ব্যবস্থা ।
মেঘপুঞ্জি রিসাের্ট : সুন্দর ইকোডেকোরেশনের ও আকর্ষণীয় ভিউ সহ মেঘপুজিতে আছে ৪টি কটেজ , প্রতিটিতে ৩ - ৪ জন থাকা যাবে ।
রিসাের্ট রুংরাং : রুংরাং রিসােটে আছে ৬টি ডাবল এবং ৪টি কাপল রুম । ভাড়া ডাবল বেড - ২৫০০ টাকা , কান্দল - ২০০০ টাকা ।
আলাে রিসাের্ট : সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়ায় আলাে রিসাের্ট। ৬ টি রুমের মধ্যে ডাবল রুম ৪ টি।একদিনের ভাড়া ৮০০ - ১৫০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে সেনাবাহীনিদের পরিচালিত "সাজেক রিসোর্ট"
খাবার ব্যবস্থা:
সাজেকে আদিবাসী ও বাঙ্গালি দুই রকমের হোটেলে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছা করলে আদিবাসী হোটেলগুলো থেকে ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন । মুরগি ছাড়া ডিম, ডাল, ভর্তা সহ অন্যান্য ননভেজ খাবারও পাওয়া যায় সাজেকে।
তবে যেখানেই খান না কেন আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে । বিশেষ করে সাজেকে পৌঁছানোর দিন দুপুরের খাবারাটা খাগড়াছড়ি থেকেই অর্ডার করে গেলে ভাল হয়। আপনার জীপ চালকেরই মাধ্যমেই তার পরিচিত কোন দোকানে খাবারের অর্ডার করিয়ে নিতে পারবেন।
আরেকটি কথা সাজেকে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সবকিছু চলে সৌর বিদ্যুতে। তাই আগে থেকেই মোবাইল ফুলচার্জ আর সাথে পাওয়ার ব্যঙ্ক নিয়ে নিবেন।
একুশে সংবাদ//আ.বা.ন // ১৫.০৬.২০১৯
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :