গাঁজা আর ইয়াবা শ্রীপুরে মাদকের ভয়াবহ থাবা
গাজীপুর: দুপুর ২ টা হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে ৭ম শ্রেণীতে পড়–য়া এক কিশোর। শরীরের অঙ্গভঙ্গিই বলে দিচ্ছে সে খুব খুশি মাদক তার নখদর্পনে।
বিক্রেতার বাড়ি থেকে তুমুল গতিতে বের হয়ে বাহিরে আসতেই সামনে পড়লো এলাকার সচেতন এক যুবক। ওই যুবক খুব ভালো করেই জানে এ বাড়িতে কী হয়! রাত-দুপুরে গাজাঁখোরেরা যে দল বেঁধে এসে গাঁজা খেয়ে রাজা সেজে ঘুরে বেড়ায়- তা এলাকার কারো অজানা নয়। মাদকসেবী ওই কিশোরকে এক ধমক দিতেই পেছনে গুঁজে রাখা লুঙ্গির ভাঁজ থেকে একটু আগেই ক্রয়কৃত মাদকের পুটলিটা ছুড়ে ফেলেই ভৌঁ-দৌড়।
এতো গেলো একদিনের ঘটনা। এমন প্রতিনিয়তই ঘটছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের কাওরান বাজার সংলগ্ন আব্দুল লতিফের ছেলে আতাউর রহমান দুদু (৪২) ও তার স্ত্রী বেগম দীর্ঘদিন ধরেই সর্বনাশা মাদক দ্রব্য গাঁজার ব্যবসা করে আসছে।
দুদু পাইকারী বিক্রেতা। ইউনিয়নের ছোটখাটো অনেক ব্যবসায়ীরাই তার কাছ থেকে সূলভ মূল্যে গাঁজা নিয়ে থাকে। এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও সর্বনাশা এ মাদক নেশার কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কাওরান বাজারের উত্তরপাশে সিংগারদিঘী গ্রামের জয়নাল ক্যানভাসারের ছেলে শাহা (৩৫),মেয়ে বিমলা,একই গ্রামের সীগাল সংলগ্ন নব্বেছ মিয়া (৬০), বারতোপার নাদর আলীর ছেলে কলো মিয়া (৪৭), পুরোদস্তুর গাঁজা ব্যবসায়ী। তারা খুচরা বিক্রেতা, দুদুর কাছ থেকে পাইকারী দরে ক্রয় করে খুচরা মূল্যে বিক্রয় করে। তাছাড়া যুগিরছিট ইউনিয়নের মো. আউয়াল (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত।
কাওরান বাজারের গরু খামারী আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, রাতদুপুরে গাঁজাখোরের দলেরা আমার বাড়ির আশপাশ দিয়ে যাতায়াত করে, চোখের সামনেই আরো অনেক কিছুই দেখি কিন্তু বলতে পারি না। গাঁজাখোরের দলেরা কখন গরু চুরি করে নিয়ে যায় সব সময় সেই দুশ্চিন্তায় থাকি।
সূত্রমতে, ছোটখাটো আরো অনেক ব্যবসায়ী এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেই রয়েছে। মাদকের সহজ লভ্যতার কারণে মাদক বিক্রেতা আর সেবনকারীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। সর্বনাশা মাদক দ্রব্য ইয়াবা ও গাঁজার হাত থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও বাদ পড়ছে না।
ইয়াবা: এমসি বাজারের উত্তর পাশে সুফিয়া কটন মিল সংলগ্ন জপ্তার পুকুরপাড় ভাড়াটিয়া শাহা মিয়া (৫০),সেলুন ব্যবসায়ী আলামিন, বেপারি বাড়ির হেলাল বেপারি,ভাড়াটিয়া সজিব এরা প্রত্যেকেই ইতোমধ্যে ইয়াবা সম্রাট হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
উপজেলার কারো কাছে ইয়াবা না থাকলেও তাদের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যায় বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আলামিন তিনবার জেলও খেটেছে কিন্তু বের হয়ে আবার ইয়াবা ব্যবসায় কোমর বেঁধে নেমেছে বলে জানা যায়। একটি সূত্র থেকে জানা যায় প্রতিদিন তারা ৫-৬ শ’ ইয়াবা বিক্রি করে। ইয়াবা প্রতি দাম রাখে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনকে হাত করেই তারা এ অবৈধ ব্যবসা করছে।
অন্যদিকে উপজেলার আনসার টেপির বাড়ির আবুল হোসেনের ছেলে মো. মোবারক হোসেন (৪০) খুব কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে। স্বামী পরিত্যক্ত জেসমিন (৩০) কে দিয়ে খদ্দের ধরে খুব বিশ্বস্ততার সাথে ইয়াবা বিক্রি করছে।
কাওরাইদ ইউনিয়নের স্থনীয় লোক জনের কাছে খবর নিয়ে জানা যায়, কাওরাইদ কালী বাড়ি,কাচারি ঘাটসহ রেল লাইনের আশে পাশে অপরিচিত কিছু মাদক ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্থানে দেধারছে বিক্রি করছে এসব নেশা জাতীয় মাদক দ্রব্য।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, মাদকের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, মাদক সমূলে নির্মূল করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
একুশে সংবাদ // এস.সানি // ১৮.১১.২০১৮
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :