শ্রীপুরে গেলী নামের এক ব্যাটারী কারখানার রাম রাজত্ব
গাজীপুর : গত বুধবার বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের ভেন্যু শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্বখন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের ফুটবল খেলা চলছিল, এরই মধ্যে বিদ্যালয় লাগোয়া গেলি ইন্ডাষ্ট্রিজ নামের একটি ব্যাটারী কারখানা হতে বিষাক্ত গ্যাস ছাড়া হয়। সাথে সাথেই কান্নকাটি শুরু করেন শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। খেলার আনন্দ পরিনত হয় বিষাদে, পরে ঐদিনের খেলা পন্ড হয়ে যায়। এ সমস্যা শুধু একদিনের জন্য নয়। গত তিন বছর আগে প্রশাসনের চোখের সামনে স্থানীয়দের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিদেশী মালিকানাধীন এই কারখানাটি গড়ে উঠে।
যেখানে পুরাতন ব্যাটারী ভেঙ্গে নতুন ব্যাটারী তৈরী করা হয়। কারখানার সমস্ত কার্যক্রমে জড়িয়ে রয়েছে ক্ষতিকর নানা দিক। এই কারখানার রাসায়নিকের ধোয়ায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে কারখানার ১”শ গজ দুরুত্বে
থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা।
অথচ এসব ক্ষতিকর দিক হতে শিশুদের রক্ষায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোন ফল পায়নি। এখন আশা নিরাশার দোলাচলে রয়েছে তাঁরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইয়াসমিন আক্তার জানান, ১৯৬৮সালের বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়ে ৪৫১জন নিয়মিত শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। কারখানাটি প্রতিদিন অনবরত পুরাতন ব্যাটারীর বিভিন্ন উপকরণ পোড়ায়।
এতে সৃষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় বিদ্যালয়সহ ওই এলাকার আশপাশ। ধোঁয়ার কারণে শ্রেণী কক্ষের জানালা বন্ধ করে পাঠদান করতে হয়। বিষাক্ত ধোঁয়ায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের মুহুর্তের মধ্যে কাশি, চোখ জ্বলা, বমি, মাথা ঘুরানো ও পেট ব্যাথা শুরু হলে এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের ছুটি দিতে হচ্ছে, এমন কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়াও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাও অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করছেন।
তিনি আরো জানান, ২০১৭সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন দিলেও কোন কাজ হয়নি।
উপরোন্ত বিদ্যালয় থেকে কারখানাকে এনওসি দেয়ার জন্য চাপ তৈরী করা হচ্ছে।এর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দেয়ারও প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। কারখানার সামগ্রিক ক্ষতিকর দিকের কারনে আমরা এনওসি দেয়ার অপরাগতার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। সবশেষ আবারো গত বৃহস্পতিবার মাননীয় জেলা প্রশাসকের নিকট পুনরায় আবেদন করেছি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা রেজা জানান,এ বিদ্যালয়ে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকতা করছি। কিন্তু এখন কারখানার বিষাক্ত ধোয়ায় শারিরীক ভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাই অন্যত্র বদলী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহমুদার অভিভাবক আব্দুল আজিজ জানান, আমরা আমাদের শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাই। কিন্তু দু:খের বিষয় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কারখানার ধোঁয়ায় মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মুক্ত নিশ্বাস নেয়া শিশুদের অধিকার, আমাদের আশা সরকার শিশুদের জীবন রক্ষার্থে এখানে ভূমিকা রাখবে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সালেহ ফয়সালের মতে, পুরাতন ব্যাটারী পুড়ানোর ফলে যে ধোঁয়া নির্গত হয় তাতে নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি এ রোগের প্রকোপে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যেতে পারে যে কোন শিশু।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হতে প্রাপ্ত আবেদন প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড:দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান,এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদন আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ // এস.সানি // ০৭.০৭.২০১৮
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :