AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

৪ দিন রাস্তার পাশে পড়ে থাকার পর এখন বৃদ্ধাশ্রমে মজিরন


Ekushey Sangbad

০৫:১৭ পিএম, জুন ১২, ২০১৮
৪ দিন রাস্তার পাশে পড়ে থাকার পর এখন বৃদ্ধাশ্রমে মজিরন

গাইবান্ধা : রাস্তার পাশে চার দিন পড়েছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফুটানির বাজার এলাকার মৃত হাসানু মিয়ার স্ত্রী নিঃসন্তান মজিরন বেগম (৯৬)। তাকে বৃদ্ধ সেবা বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসা হয় ২০১৭ সালের ১২ জুন। তিনি হাঁটতে পারেন না। আগে যেখানে অযত্ন আর অবহেলায় দিন কাটতো এখন ভালো পরিবেশে তিন বেলা খেয়ে দিন কাটছে মজিরন বেগমের। বৃদ্ধ সেবা বৃদ্ধাশ্রম সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের তালতলা বালুয়াবাজারে ২০১৭ সালের মে মাসে একজন বৃদ্ধ ও পাঁচজন বৃদ্ধাকে নিয়ে গড়ে ওঠে বৃদ্ধ সেবা বৃদ্ধাশ্রমটি। ওই মাসেই বৃদ্ধাশ্রমটি গোবিন্দগঞ্জ-নাকাইহাট-গাইবান্ধা সড়ক সংলগ্ন গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার বোয়ালিয়া শিববাড়ী গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এখানে বৃদ্ধ রয়েছেন পাঁচজন ও বৃদ্ধা রয়েছেন ১২ জন। বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা কমিটির ১২ জনের মধ্যে ৯ জনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। আর তিনজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।প্রতি মাসে এসব অসহায় মানুষদের খাওয়ার জন্য চাল লাগে সাড়ে ১১ হাজার টাকার, ওষুধ সাত হাজার টাকার, রান্নার জন্য খড়ি লাগে এক হাজার ৮০০ টাকার, বৃদ্ধাশ্রমের বাসা ভাড়া ছয় হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল এক হাজার টাকা ও কাঁচা বাজারসহ অন্যান্য উপকরণ বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাদের খাবার রান্না করা, যত্ন নেয়া ও পড়ানোর জন্য রয়েছেন তিনজন মহিলা ও নাইটগার্ড রয়েছেন একজন। তাদেরকে প্রতিমাসে দিতে হয় ১০ হাজার ২০০ টাকা।এর মধ্যে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আসে বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা কমিটি থেকে ও বাকি টাকা আসে বিভিন্ন মানুষের সাহায্য নিয়ে। এদের মধ্যে সাতজন রয়েছেন উপদেষ্টা কমিটিতে। এ ছাড়া ৩০ জন রয়েছেন যারা বৃদ্ধাশ্রমে প্রতিমাসে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। এসব অসহায় মানুষদের ভালোভাবে জীবন-যাপনের জন্য প্রতিমাসে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হচ্ছে। প্রতিদিন অসহায় মানুষরা আসেন বৃদ্ধাশ্রমে থাকার জন্য। কিন্তু টাকার অভাবে তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে দিতে পারছেন না বলে জানান বৃদ্ধ সেবা বৃদ্ধাশ্রমের উদ্যোক্তা ও সভাপতি আপেল মাহমুদ। বৃদ্ধ সেবা বৃদ্ধাশ্রমের উদ্যোক্তা আপেল মাহমুদ তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম। বাবা মোকছেদ আলী কৃষি কাজ করেন ও মা রেহেনা বেগম গৃহিনী। আপেল মাহমুদ বর্তমানে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মজিরন বেগমের মতো এই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের বোয়ালিয়া এলাকার অসহায় বাদশা মিয়ার (৭০)। তার এক ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় থেকে শ্রমিকের কাজ করেন আর মেয়ে বিবাহিত। পাঁচ বছর আগে প্যারালাইজডে আক্রান্ত হলে তার স্ত্রী তাকে ফেলে রেখে বাবার বাড়িতে চলে যান। তারপর তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। চলাফেরা করতে পারেন না। এই বৃদ্ধাশ্রমে ৯ মাস থেকে আছেন বাদশা মিয়া। এখন আগের চেয়ে তিনি অনেক ভালো আছেন। দিন দিন তিনি সুস্থ হচ্ছেন। তাদের মতো আরও ১৫ জন অসহায় মানুষ আছেন এই বৃদ্ধাশ্রমে। মজিরন বেগম সম্পর্কে বৃদ্ধাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কলাচিপা চারমাথা এলাকা থেকে একদিন খবর এলো একজন বৃদ্ধা চারদিন থেকে রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছেন। পরে আমরা গিয়ে তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসি। পরে তিনি সুস্থ হলে তার কাছে ঠিকানা নিয়ে আমরা তার স্বামীর বাড়ি ও বাবার বাড়িতে যাই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন মজিরন বেগম। ১৫ বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর ভরণ-পোষণের কথা বলে স্বামীর বাড়ি ও বাবার বাড়ির স্বজনরা জমিসহ বসতবাড়ি লিখে নেন। পরে বাবার বাড়ির এলাকায় অন্যের জমিতে দুইটি টিন ও আখের পাতার বেড়া দেয়া একটি ছোট্ট ঘরে ছিলেন মজিরন বেগম। তিনি সেখানে থাকতেন আর এদিক সেদিক খেয়ে না খেয়ে ঘুরে বেড়াতেন। এই বৃদ্ধাশ্রমটি প্রতিষ্ঠার কারণ জানতে চাইলে আপেল মাহমুদ জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ছোট সোহাগী গ্রামের এক বাড়িতে থাকতেন ভূমিহীন নিঃসন্তান মোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী আজিরন বেগম। ২২ বছর আগে মোফাজ্জল হোসেন মারা গেলে আজিরন বেগম একা হয়ে যান। তিনি দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক সময় চলাফেরা করতে না পেরে বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করতেন। কিন্তু তার দেখভাল করার মতো কেউ ছিল না। পরে বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেয়া হলে তিনি পথে পথে ঘুরে বেড়ান। আজিরন বেগম দীর্ঘদিন কষ্ট ভোগ করে ১৩ মাস আগে পথেই মারা যান। তিনি বলেন, আজিরন বেগমের এ কষ্ট প্রতিদিন খুব কাছ থেকে দেখে আমার ভীষণ মায়া হয়। এরপর শহিদুল ইসলাম খোকন ও মো. শামসুজ্জোহা মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করি। পরে একটি কমিটি গঠনের পর বৃদ্ধাশ্রমটি চালু করি। প্রথম দিকে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত টাকায় বৃদ্ধাশ্রমটি চালানো হলেও পরে অসহায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয়ভার বহন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এখন আমাদের ১২ জনের ব্যক্তিগত টাকা ও বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে পাওয়া সাহায্য নিয়ে বৃদ্ধ সেবা বৃদ্ধাশ্রম চলছে।         একুশে সংবাদ //এস.রুবেল // ১‌২.০৬.২০১৮
Link copied!