AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কথা সাহিত্যিক র‌্যাক লিটন দহনে সুখ উপন্যাসের বিশ্লেষন


Ekushey Sangbad

০২:৫৪ পিএম, মে ২৮, ২০১৮
কথা সাহিত্যিক র‌্যাক লিটন দহনে সুখ উপন্যাসের বিশ্লেষন

সচরাচর আমি মহান একুশে বই মেলায় নবীন লেখকদের বই খুঁজি। ঠিক তেমনি ভাবেই ২০১৩ সালের মহান একুশে বই মেলায় পেলাম, কথা সাহিত্যিক র‌্যাক লিটনের উপন্যাস, ”দহনে সুখ”। নামটির বিশ্লেষন করতে পারছিলাম না বলেই অঙ্কুর প্রকাশনীর স্টোলের সামনে দাঁড়িয়ে লেখকের দেখা করলাম। লেখকের সাবলিল ভাষায় বর্নণা আমার খুব ভাল লেগেছে। এত সুন্দর করে যে কেউ কাউকে বোঝাতে পারেন তা আমি হয়ত প্রথম। যা হোক কথা সাহিত্যিক র‌্যাক লিটন আমাকে বোঝালেন পৃথিবীতে এমন কোন সুখ নেই যাকে দুঃখ স্পর্শ করেনি। প্রথমতঃ বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল। সাবলিল ভাবে বোঝালেন যে, কষ্ট আছে বলেই সুখ অনুভুত হয়। দহন আছে বলেই শান্তির স্পর্শ লাগে মনে প্রানে। পেটে ক্ষিধা লাগে বলেই খেতে ভাল লাগে। গরম লাগে বলেই ঠান্ডা বাতাশ ভাল লাগে, এমন অনেক বর্ননা দিয়ে তিনি আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন। আমি বুঝলাম, পৃথিবীতে সকল সুখের মাঝে দুঃখ লুকিয়ে থাকে, দুঃখ ছাড়া সুখের অস্তিত্ব নেই। বইটির নামকরনের স্বার্থকতা পেলাম, যখন দহনে সুখ উপন্যাসটি আদিঅন্ত পড়লাম। উপন্যাসটিতে কি নেই্? সমাজ, সংস্কার, ইতিহাস, ধর্ম, বর্ণ, উচু নিচুর ভেদাভেদ, কালো সাদার ভেদাভেদ সাথে ঐশ্বরিক সহ অনেক কিছু। উপন্যাসটিতে প্রাধান্য পেয়েছে পৃথিবীর অবহেলিত হিজড়াদের কথা। আমরা সবাই হিজড়াদের অবহেলা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি কিন্তু লেখক এই অভাগাদের সম্মানের স্থানে বসিয়েছেন। তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কেন তাদের নাগরিকত্ব নেই। কেন তারা আজ দেশের জন্য বোঝা? কেন তাদের সম্মান দেয়া হয়না, যা একজন মানুষ মাত্রেই পাওনা। তিনি বিভিন্ন ধরনের উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন এই হিজড়া অবহেলিত হতে পারেনা। এদের নাগরিকত্ব সহ দেশের সকল সুবিধা পাওয়া অধিকার। উল্লেখ্য যে, উক্ত বছরেই মাননীয় সরকার মহোদয় হিজড়াদের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। তিনি মানবতা আর প্রেম ভালবাসাকে এক দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি মনে করেন, মানবতার প্রতিটি কোষে লুকিয়ে থাকে ভালবাসার মাইক্রোকন্ডিয়া। তাই মানবতাকে যদি জয় করতে হয়, তাহলে ভালবাসার কোনো বিকল্প নেই। তবে সে ভালবাসা সবার জন্য সমান, সেখানে সাদা-কালো, ধনী-গরিব, ধর্ম বা জাতের কোনো ভেদাভেদ নেই। পৃথিবীর সকল মানুষ একই কাতারে, একই জায়গা থেকে উৎপত্তি এবং তাদের গন্তব্য স্থলও এক...। তিনি লিখেছেন, শুধুমাত্র যৌনসঙ্গম করার ক্ষমতা নেই বলে, হিজড়া আজ অবহেলিত। তারা মানুষ হলেও, মানুষ হিসাবে প্রতিয়মান হয় না। তাদের প্রতি কারও ভালবাসা নেই, হিজড়াকে কেউ ভালবাসে না। তারা দেশে জন্মগ্রহণ করার পরও, দেশের সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত! তাহলে এখানে কি প্রমাণ হয় না যে, শুধুমাত্র যৌনসঙ্গম করতে পারে না বলে, তারা দেশের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা বিয়ে করতে পারে না বলে, তারা দেশের সকল সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত! কেন...? তিনি লিখেছেন, পৃথিবীতে এই ভালবাসার কারণে, অনেক অঘটন ঘঠেছে। হয়েছে যুদ্ধ পর্যন্ত। ভালবাসার কারণে, অনেক জীবনকে বিসর্জন দিতে হয়েছে, খুবই বিস্ময়কর বিষয় যে, আজ পর্যন্ত এমন কোনো অঘটন ঘটে নাই বা মৃত্যুবরণ করে নাই বা মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় নাই, একজন অন্য একজনকে ঘৃণা করার অপরাধে। তিনি লিখেছেন, একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসার মধ্যে কি এমন আছে? কেন এক নজর একদিন দেখতে না পেলে তার অস্থির লাগে, কিসের এই বন্ধন! কিসের এত মায়া! পৃথিবীতে ভালবাসার প্রমাণ রেখে গেছেন-লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রমিও-জুলিয়েট এরূপ অনেকে। যতগুলো ভালবাসার প্রমাণ বা অবিস্মরণীয় প্রেম আছে, দেখা যায়; তাদের কখনও মিলন হয় নি। আসলে অনেকে বলে থাকেন যে, প্রেমের সমাধী বিয়েতে! কথাটি এই বেলায় খেটে যায়, যদি লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রমিও-জুলিয়েট এর মিলন ঘটতো, তাহলে তারা আজ বিশ্ব বরেণ্য হতে পারতো না। তিনি লিখেছেন, ইদানিং কালে “ভ্যালেটাইন ডে”পালন করা হয়। এই দিনে একে অপরের কাছে প্রেমকে বিলিয়ে দেয়। এই “ভ্যালেটাইন ডে” কিন্তু শোকের দিন। এই দিনেই “ভ্যালেটাইন” তার প্রেমের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তার মানে এই “ভ্যালেটাইন ডে” তে, যে সকলেই ভালবাসায় মুগ্ধ হচ্ছেন। সেখানেও বিরহ, মানে বিচ্ছেদের ঘটনা। তাহলে ভালবাসার মিলনের চেয়ে বিচ্ছেদই উত্তম। উক্ত ব্যক্তি বর্গ, এমন কোনো কিছু করেননি যে, পৃথিবী তথা পৃথিবীর মানুষ, তাদের মনে রাখবে। অমর হয়ে থাকবেন, পৃথিবী যতদিন রয়! আজ তারা পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করেছেন। প্রমাণ করেছেন, প্রেমের জন্য মৃত্যু হলেই, অমরত্ব লাভ! “কে বলে মিলনে সুখ, সে গর্ধব একজন। বিচ্ছেদ বয়ে আনে সুখ সাগর সম।।” তিনি বলেছেন আজ অবদি কি, ছেলে ছেলেকে ভালবেসে অমর হয়েছে অথবা মেয়ে মেয়েকে ভালবেসে অমর হয়েছে! ভালবাসা মানে তো কোনো ভেদাভেদ নেই, ছেলে অথবা মেয়ে মেয়েকে ভালবেসে অমরত্ব লাভ সম্ভব নয় কেন? কারণ একটাই এই ঘটনায় দৈহিক মিলন নাই। বিপরিত দুটি লিঙ্গের মিলনের কারণেই প্রেমের সৃষ্টি। তাহলে অনায়াসে বলা যায় ”সেক্স বিহীন ভালবাসা মূল্যহীন”। দহনে সুখ বইটিতে তিনি একটি বিশেষ বিষয়ে কোড করেছেন তা হলো আত্মার খেলা। তিনি লিখেছেন মানুষের আত্মা দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। আত্মা যেহেতু একটি শক্তি। শক্তির রুপান্তর করে অনেক কিছু করা সম্ভব। তিনি বইটিতে লেখেছেন একজন মানুষ হাজার হাজার মাইল দুরের কোন মানুষকে নিজ আত্মার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংবাদ আদান প্রদান করতে পারেন। যদি স্কাইপি/রেডিও/টেলিভিশন/ফ্যাক্স ইত্যাদির কথা ধরা যায়, তাহলে খেয়াল করলে বুঝা যায়, হাজার হাজার মাইলের খবর, ছবি, কথা ইত্যাদি কিভাবে এক স্থান থেকে, অন্য স্থানে সরবরাহ করছে? কারণ একটাই, শক্তির কোনো ক্ষয় বা বিলীন নাই। যদি কিছু বস্তু দিয়ে এই কঠিনতর উপাত্ত-ছবি-কথা-লেখা আদানপ্রদান সম্ভব হয়, তাহলে মানব দেহ-মানব আত্মা দিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব। এক দেহ থেকে অন্য দেহ, এক মন থেকে অন্য মনে উপাত্ত, ছবি-কথা আদান-প্রদান অতি সহজেই সম্ভব! খেয়াল করলে বুঝতে পারা যায়, অনেক সময় কোনো বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কারও কথা গভীরভাবে চিন্তা করছে, অথবা ভাবছে তার সাথে কথা বলা দরকার, ঠিক পরক্ষণেই দেখা যায়, সে তার কাছে ফোন করেছে অথবা সে তার কাছেই এসে গেছে। কেন এমন হয়! যখন কেউ অন্য একজনের কথা অতি আন্তরিকভাবে জপ করে, তখন তা মনের কথা অদৃশ্যভাবে অন্য মনে তড়িৎ গতিতে স্থানান্তর হয়... দহনে সুখের একটি অনুচ্ছেদ সরাসরি কোড করলামঃ ” আরাধ্য কোনো কথা বলল না, শুধু ফিরে এসে চায়ের দাম দিয়ে দিল। রাত খুব বেশি না হলেও, এ সময় সচরাচর কোনো কাজ না থাকলে বাহিরে কেউ থাকে না। রাস্তার ধারের দোকানগুলো বন্ধ। রাস্তার পাশের একটি দোকানের সামনে লাইট জ্বলছে। আরাধ্য দেখল দুটি শিশু দোকানের বারান্দায় শুয়ে আছে। আরাধ্যের মনের কষ্ট হয়। নিজের কষ্টের চেয়ে নিস্পাপ শিশু দুটির দৃশ্য মনকে ব্যাকুল করে। দ্রুত পায়ে বারান্দায় গিয়ে দেখল, একটি ছেলে অন্যটি মেয়ে। গায়ে কাপড় নেই। হাজার হাজার মশা শরীরের রক্ত চুষে খাচ্ছে অবলিলায়, যেন নিস্পাপ শিশুর রক্তে অনেক মজা। যেখানে ছোট শিশুর গায়ে মশা বসলেই শিশুরা কেঁদে উঠে, সেখানে রাক্ষুসে মশার কামড়েও তাদের কোনো অনুভূতি নেই। চরম সুখের নিন্দ্রায় নিদ্রিত। আরাধ্যের বুক ফেঁটে যেতে লাগল। নিস্পাপ শিশু! বয়স সাত থেকে আট বছর। দেখে মনে হলো, সারাদিন কিছু খায়নি। নিঃশ্বাস নেয়ার সময় ছোট পেট যেন পিঠের সাথে মিশে যাচ্ছে। আরাধ্যের ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। আরাধ্য শিশু দুটির পাশে বসল, হাত দিয়ে মশাগুলো তাড়িয়ে দিল। কি দোষ এই শিশুদের? তারা কি কোনো পাপ করেছে, আজ তাদের এ শাস্তির ব্যবস্থা? তাদের তো পাপ করার বয়স হয় নি, তাহলে কেন আজ এখানে? এদের কি কেউ নেই? কেন কেউ নেই? অনেক প্রশ্ন মনকে উতলা করে। যে সময়ে মায়ের কোলে ঘুমানোর কথা সেখানে পথেই তাদের ঠিকানা হল কেন? আজ এই শিশু দুটি পথের পাশে শুয়ে আছে নিরবে। “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”, “আজ যে শিশু, কাল সে দেশের কর্ণধার”, এরাই কি পরবর্তী দেশের কর্ণধার হবে? অবশ্যই হবে না। এরাই বড় হবে, এরা দেশের কর্ণধার হবে তবে, সন্ত্রাসীদের কর্ণধার। কারণ যাদের কোনো পিছুটান থাকে না, তারাই দেশের সন্ত্রাসের নায়ক হয়। ছোটবেলা থেকেই এদের কারও কাছে জবাবদিহিতা নেই, বলেই সন্ত্রাসের রাজ্যে প্রবেশ করতে তাদের খারাপ লাগে না বা ভয় লাগে না। শিশুকাল থেকেই সবার চর থাপ্পড়, লাথি খেয়েই এরা বড় হতে থাকে। মেয়েটির কি হবে? এই মেয়েটিই তো পরবর্তীকালের শহরের কোনো হোটেলের নর্তকি অথবা কোনো পতিতালয়ের পতিতা। আরাধ্যের মাথা টনটন করে উঠে। সে শিশু দুটির গায়ে হাত দিয়ে ডাকে, এ শুনছো? কয়েকবার ডাকল, তাদের কোনো সাড়া শব্দটুকুও পেল না। সারাদিন না খাওয়া শরীর নেতিয়ে পড়ে আছে। সে একটু জোরে গা নাড়া দিয়ে ডাকল। শিশু দুটি চোখ খুলে তাকাল, নিষ্পাপ শিশুর চাহনি তার হৃদয় ভেঙ্গে খানখান করে দিল। আরাধ্যের চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা পানি ঝড়ে পড়ল, যা শিশু দুটির চোখ এড়ায়নি। শিশু দুটি তার চোখের পানি দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসল, স্যার আপনি কাঁদছেন কেন? এই বয়সে কোনো শিশু কাউকে স্যার বলতে পারার কথা নয়। কিন্তু পরিবেশ তাকে বশ মানিয়েছে। আরাধ্য কিছু বলতে পারল না, চোখ মুছে জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের বাড়ি কোথায়? আমাদের কোনো বাড়ি-ঘর নেই, তাদের খুব সহজসরল উত্তর। বাবা মা? জানি না কে আমাদের বাবা-মা। রাতে কিছু খেয়েছো? না স্যার, কয়েক জায়গায় গেছিলাম দু’জন, কেউ খেতে দিল না। দুটি শিশুর নিরব আর্তনাদ, নিজেকে মানুষ বলতে ঘৃণা হলো তার। শিশু দুটিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। শিশু দুটি নিরবে তার বুকের মাঝে আসে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে আরাধ্যের। স্যার আপনি কে? কেন আমাদের আদর করছেন? জন্মের পর আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের আদর করেনি স্যার। সবাই কুকুরের মত ব্যবহার করে আমাদের সাথে স্যার। বড় লোকরা তার কুকুরকে খাওয়ায় কিন্তু আমাদেরকে দেয় না। আরাধ্য তাদের কথার কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। হাত ধরে টেনে তুলে নিয়ে পাশের একটি হোটেলে গিয়ে বসালো। খাবারের অর্ডার দিল। সে তাদের পাশে বসলো, ওরা দু’জন ছোট ছোট হাত দিয়ে খাচ্ছে। সাধারণ খাবার গুলো তারা যে আনন্দে খেতে লাগল, সেই আনন্দ আরাধ্য তার জীবনে কখনও দেখেনি। খাওয়া শেষ হলে, একটি রিক্সা করে দু’জনকে বাড়িতে নিয়ে এসে তার সংগঠনের আশ্রিতাদের বলল, আজ থেকে এরা এখানেই থাকবে। আমি তোমাদের স্কুলে ভর্তি করে দিব। তোমারা স্কুলে যাবে। দু’জনে লাফ দিয়ে উঠল, আমরা স্কুলে যাব, হুররে। হিজড়ারা শিশুদের পেয়ে মনে হলো নিজের শিশু তাদের কাছে চলে এসেছে। সবাই তাদের আদরে আদরে ভরে দিল, নিষ্পাপ মুখ দুটি সবার দিকে চেয়ে থাকে-------। অসমতা তোমরা যখন লেপ মুড়ি দিয়ে, ঘুমাও অট্টালিকায়, গরিবরা তখন ঘুমাতে পারে না ঠান্ডায়, পাতা ঝড়া গাছ তলায়। শিতাতপে থাক যখন তোমরা মহা সুখে, তখন ওরা মরে গরমের দাপটে। কি খাবে কি খাবেনা, যখন তোমাদের ভাবনা তখন ওদের ছোট্ট পেটের খাবার জোটেনা। তোমাদের ছেলে মেয়ে যখন আনন্দে, ছুটে বিদ্যালয়ে, ওরা তখন পেটের জ্বালা সইতে না পেরে, ছুটে যায় কলকারখানাতে। বিদ্যালয় ছুটির পর, ঘরে ফিরে যখন, তোমাদের ছেলে-মেয়ে, তখনও ওরা কাজ করে ঘর্মাক্ত হয়ে, কলকারখানাতে। সবাই সমান হব বলে, করেছি বাংলা স্বাধীন, অসমতা দৃশ্যে আজ ভাবি, ভালই ছিলাম, যখন ছিলাম পরাধীন। দহনে সুখ উপন্যাসে একজন হিজড়ার বক্তব্যঃ একদিন এক সদ্য চাকুরিপ্রাপ্ত হিজড়া, যার নাম মরিয়ম, তাকে আরাধ্য প্রশ্ন করে নতুন চাকুরি পেয়ে, কেমন লাগছে বোন? মরিয়ম এর উত্তর দিতে পারেনা। দুচোখের পানি ছেড়ে তাকিয়ে থাকে আরাধ্যের পানে। মরিয়মের চোখের পানি দেখে, আরাধ্য চোখেও পানি আসে। মরিয়ম কান্না জড়িত কন্ঠে বলল ভাইয়া, আজ আমার বয়স প্রায় ২২ বছর। আমার জ্ঞান-বুদ্ধি হবার পর থেকে বাহিরে বাহিরে ঘুরে, ভিক্ষা করেই জীবন চালিয়েছি। বাবা-মায়ের কাছেও যেতে পারিনি। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে ভিক্ষা করে জীবন কাটাতে চায়। সবাই চায় নিজের পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে জীবন চালাতে কিন্তু আমার জীবন শুরুই হয়েছে ভিক্ষা দিয়ে। যেখানে ভিক্ষা একটি নিকৃষ্ট পেশা হিসাবে বিবেচিত। এর চেয়ে বড় অভিশাপ আর কি হতে পারে। নিঃশ্বাস ফেলে মরিয়ম বলল ভিক্ষা করতে গেলে কত মানুষের কত কথা শুনেছি। কতজন আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছে, সব মুখ বুঝে সহ্য করেছি। ভাইয়া, বনের ছোট প্রাণী সজারু যখন, বাঘ বা সিংহের সামনে পড়ে, তখন তার শরীরের প্রাকৃতিক ভাবে গঠিত কাঁটা গুলোই তার শেষ সম্বল হিসাবে কাজ করে। প্রাণীটি তার কাঁটাগুলোকে এমনভাবে মেলে ধরে যে, অনেক ছোট প্রাণী হলেও বাঘের মত প্রাণী তাকে মেরে খেতে পারে না। এই সামান্য ক্ষমতাটুকু যদি প্রয়োগ করতে না পারতো, তাহলে তাদের ছোট শরীর, বড়রা তাদের পেটের মধ্যে নিতে কোনো সময় ব্যয় করত না। আমরা হিজড়ারা সেই ছোট প্রাণীটির মত, অনেক ধরণের ক্ষমতা প্রয়োগ করি, অনেক সময় নিজেদের ইজ্জতের উম্মাচনের মত ঘৃণিত কাজও করি। শুধুমাত্র হীন মানুষদের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। তুমি দেখতে পাবে, সমাজের মানুষ হিসাবে প্রতিয়মান যারা, তারা আমাদের দেখে ভয় পায়। বাসায় ফেরার পর কত কেঁদেছি। অনেকবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। আবার ভেবেছি আত্মহত্যা করে কি হবে! হাজারও বার সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করেছি, কেন আমাকে জন্মানো হল! কেন জন্মের পর আমার বাবা-মা আমাকে মেরে ফেলেনি। চোখ মুছে মরিয়ম বলল, আজ আমি পৃথিবীর একজন সক্ষম ব্যক্তি ভাইয়া। আমি নিজেই পরিশ্রম করি। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে নিজের বাসায় থাকি। নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে বাজার করি। ভাইয়া, আমি এখন আমাকে আর ছোট মনে করি না, মনে করি আমি অন্যান্য মানুষদের মতই একজন। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। জীবন যুদ্ধে আমি একজন জয়ী ব্যক্তি। এই জয়ের সকল অর্জন তোমার ভাইয়া। তুমিই আমার বাবা, তুমিই আমার মা। তুমি আমার ভাই তুমিই সব। তুমি অনেক অনেকদিন বেঁচে থাকবে। ছোট বোন হিসাবে একটা কথা বলি, আমি জানি না তোমার জন্য আমি কোনোদিন কিছু করতে পারবো কিনা, তবে তোমার জন্য আমি আমার জীবনটাকে অনায়াসে উৎসর্গ করলাম। লেখকের পরবর্তী আরও কয়েকটি উপন্যাস আমি পড়েছি তার মধ্যে গার্মেন্টস শিল্পের মেহনতি মানুষদের নিয়ে ”সেলাই আপা”, ধর্ষিতা সহ সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা-অপরাহ্নে বিসর্জন এবং উত্তর বঙ্গের অবহেলিত অভাবীদের নিয়ে লেখা মঙ্গা”। সর্বপরি কথা সাহিত্যিক র‌্যাক লিটন একজন এমননি লেখক যিনি ব্যবসায়িক ভাবে উপন্যাস লিখেন না। তিনি দেশের নির্যাতিত অবহেলিত, শোষিত ব্যক্তিদের নিয়েই তাঁর লিখা। একুশে সংবাদ // এস. র‌্যাক লিটন // ২৮.০৫.২০১৮
Link copied!