AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রমজান মাস সামনে রেখে মুড়ি তৈরীতে ব্যস্ত


Ekushey Sangbad

০৫:৪৭ পিএম, মে ১৪, ২০১৮
রমজান মাস সামনে রেখে মুড়ি তৈরীতে ব্যস্ত

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম বারতোপা। আসছে পবিত্র রমজান মাস, সিয়াম সাধনার এমাসকে ঘিরেই ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে ওই গ্রামের মানুষদের। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের অতি প্রয়োজনীয় মুড়িকে ঘিরেই চলছে এ প্রকারের ব্যস্ততা। প্রাচীন আমলের পদ্ধতি অনুসরণ করে হাতের তৈরী মুড়ির বাজারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে এখনও টিকে রয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বারতোপা গ্রামের হাতে ভাঁজা মুড়ি। স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদা মিটিয়ে বারতোপা গ্রামের এ হাতে ভাজা মুড়ি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। রোববার দুপুর সাড়ে বারোটা। বারতোপা গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে এ মুড়িকে ঘিরেই ব্যস্ততা। কেউ লাকড়ি কুড়াচ্ছেন, কেউ সড়কে মুড়ির চাল শুকাচ্ছেন, কেউবা বিশেষ ধরণের মাটির তৈরী চুলায় খোলায় চালে উত্তাপ দিচ্ছেন। গরম বালুর পরশে তা মুড়মুড় করে ফুটে তৈরী হচ্ছে সুস্বাধু মুড়ি। প্রতিটি বাড়িতে মুড়ির তৈরীর ব্যস্ততা বলে দিচ্ছে এ যেন মুড়িরই গ্রাম। মুড়ি এ শব্দ যেন জীবনের ছন্দ জড়িয়ে আছে তাঁদের। সারা বছর এই গ্রামের মানুষ বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকলেও রমজান আসার পুর্বেই নারী ও পুরুষরা মুড়ির তৈরীর কাজে লেগে যান। ক্রেতাদের বিষমুক্ত মুড়ি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জীবিকার তাগিদে তাঁরা এ পেশায় জড়িত হন। নারীরা চাল শুকানো থেকে ভাঁজার কাজ করে থাকেন। আর পুরুষরা সেসব বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেন। পুরুষরাও নারীদের একাজে সহায়তা করে থাকেন। সনাতন প্রক্রিয়ায় হাতে মুড়ি ভাজা যেন তাদের জীবনেরও একটা অনুষঙ্গ। হাতে ভাজা মুড়ির বিশেষ বিশেষণ হচ্ছে, এতে রাসায়নিক উপাদানের কোন প্রয়োগ করা হয় না। চালে সামান্য লবন পানি মিশিয়ে তা ভেজে গরম বালুতে ছেড়ে দেয়া হয়। আর এতেই মুহুর্তের মধ্যেই তৈরী হয়ে যায় সাদামুড়ি। বারতোপা গ্রামের গৃহবধু জমিলা খাতুন তিনি জানান, তাঁরা বংশানুক্রমিক ভাবে মুড়ির তৈরীর মাধ্যমে জীবিকা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে তাঁদের সনাতনী এ পদ্ধতি এখন প্রায় অচল। তবে তাঁদের তৈরী মুড়িতে কোন বিষাক্ত কিছু না থাকায় সচেতন লোকদের মধ্যে বিক্রি করা যায়। বাজারে যেখানে সাধারণ মুড়ি ৬০টাকা কেজিতে পাওয়া যায়, সেখানে তাঁদের হাতে তৈরী মুড়ি বিক্রি হয় ১’শ টাকায়। তারই প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তারের মতে, নানা কারনে এই গ্রামের অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মুড়ি উৎপাদনে আসায় এখন আর তাঁরা টিকতে পারছে না। তবে পেশার মায়ায় এখনও কোনভাবে টিকে রয়েছি। পূর্বপুরুষেরাও এ মুড়ি ভাজার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, এখন মুড়ি ভাজার শব্দের মাঝে তাদের খুঁজে পাই। একই এলাকার গৃহবধু কমলা আক্তার জানান, এখানেও রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের আনাগোনা। গ্রামের অনেকেই হতদরিদ্র বিধায় যাঁদের পুঁজি নেই তাঁরা অনেকেই মহাজনদের সাথে মুড়ি ভাজার চুক্তি করেন। মহাজনরা শুধু ধানের যোগান দিয়ে থাকেন বাকী সব উপকরণ মুড়ি তৈরীর কারিগরদের দিতে হয়। ছয় মন ধানের মুড়ি ভেজে পান মাত্র তিন হাজার টাকা। সত্তোরোর্ধ আয়েশা আক্তারের অভিমত বাজারে বড় ও ধবধবে মুড়ির চাহিদা বেশী। তাই অনেকে লবনের বদলে ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মিশিয়ে মুড়ি ভেজে থাকেন। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ। তবে তাঁদের তৈরী মুড়িতে কোন বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয় না। তবে কারখানায় উৎপাদিত মুড়িতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় বলে দাবি তার। একই এলাকার সোহরাব হোসেন জানান, তিনি বিগত চব্বিশ বছর ধরে রমজান উপলক্ষে মুড়ি তৈরী করছেন। কিন্তু এখন আর এতে তেমন লাভ পাওয়া যায় না। ক্রেতাদের অনুরোধে তিনি গত সাতদিন ধরে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে মুড়ি তৈরী করছেন। স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ছোট কালে দাদা-দাদীরা মুড়ি ভাজার কাজ করতেন। এখন লাভ কম হলেও তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরীর কাজ করছেন। শ্রীপুর মিজানুর রহমান মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ইকবালের মতে, বর্তমান বাজারে যে ধবধবে সাদা মুড়ি পাওয়া যায় তার অধিকাংশতেই রাসায়নিকের মিশ্রন রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তবে সনাতন পদ্ধতিতে হাতে ভাজা মুড়িতে তেমন বিষের প্রয়োগ না থাকায় সচেতন মানুষের মধ্যে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারতোপা বাজারের মুড়ির আড়ৎদার মহর আলীর মতে, বছর পাচেঁক আগেও এই গ্রামের শতাধিক পরিবারের অন্যতম জীবিকা ছিল মুড়ির তৈরীকে কেন্দ্র করে। সময়ের বিবর্তনে এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি বিভিন্ন ভাবে মুড়ির কারিগরদের সহায়তা করে থাকেন। আগে সারাবছর এই গ্রামে মুড়ি তৈরী হলেও এখন শুধু রমজান মাসকে ঘিরেই তা তৈরী হয়। হাতে ভাজা মুড়িতে প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় বিধায় এসব মুড়ির চাহিদা বেশী। তবে হাতে মুড়ি তৈরীতে উৎপাদন খরচ বেশী হওয়ায় প্রতি কেজি একশ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়। আর তিনি গ্রাম ঘুরে সংগৃহীত মুড়ি রাজধানীর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।         একুশে সংবাদ // এস.সানি // ১৪.০৫.২০১৮
Link copied!