হালদা থেকে সাড়ে ২২ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ
একুশে সংবাদ : উৎসবের আমেজে অন্যান্য বছরের মতো এবারও চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের পেশাদার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, হালদা নদীতে এবার মা মাছের ছাড়া ডিমের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ডিম সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এই হিসেবে এবার রেণু মিলবে প্রায় ৩৭৮ কেজি। তিনি আরও বলেন ৪০৫টি নৌকা নদীতে ডিম সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। সব নৌকা এখনও ফেরেনি। পূর্ণাঙ্গ হিসেবে রেণুর পরিমাণ আরও কিছু বেশি হতে পারে; যা খুবই আশাব্যজ্ঞক। দূষণ ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে হালদায় মা মাছের ডিম উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়ায় জেলেরাও এবার খুব খুশি।
হালদাই দেশের একমাত্র নদী, যেখানে এসে রুই-কাতলা-মৃগেল-কালিবাউশ মাছ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ছাড়ে। কেবল এই নদী থেকেই নিষিক্ত ডিম সরাসরি সংগ্রহ করতে পারেন জেলেরা। নদীর পাড়ে থাকা ছোট ছোট কুয়ায় পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপায়েই ডিম থেকে ফোটানো হয় রেণু। রুই-কাতলা-মৃগেলের সেই রেণু এরপর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
হালদা নদীর গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, 'হালদা নদীতে এবার ৪০৫টি নৌকায় জেলেরা ২২ হাজার ৭০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন।
এ বছর সংগৃহীত ডিম থেকে ৩৭৮ থেকে ৩৮০ কেজি রেণু উৎপাদন করতে পারবেন জেলেরা। গত ১০ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ডিম পাওয়া গেছে।' হালদার অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, 'হালদা নদীর ডিম ও মাছের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। মিঠাপানির বিভিন্ন উৎসে পাওয়া মাছ এক বছরে যত বড় হয়, হালদা নদীর মাছ একই সময়ে বাড়ে তিনগুণেরও বেশি।
বড় হওয়ার অনুকূল পরিবেশ পেলে হালদা নদীর কাতলা মাছ হয় ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
রুই-কাতলা-মৃগেল জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করারও আছে বিশেষ পদ্ধতি। নদীতে ডিম ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলেরা মশারির নেট দিয়ে বানানো বিশেষ জাল দিয়ে তা টেনে ওঠান।
তার আগে নৌকার খোলের মধ্যাংশে তক্তা ও মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় কৃত্রিম পুকুর। এ পুকুর সদৃশ্য গর্তে মিহি সুতার কাপড় দিয়ে রাখা হয় ডিম।
এরপর সেখান থেকে এসব ডিম রাখা হয় নদী-তীরবর্তী অগভীর কুয়ায়। ডিম থেকে রেণু ফোটাতে বিশেষ কায়দায় ২-৩ মিনিট পরপর নাড়াচাড়া করা হয় কুয়ার পানি। বাড়ার সুবিধার্থে সদ্য প্রস্ম্ফুটিত রেণুগুলো এরপর কেউ কেউ স্থানান্তর করেন আরেকটি কুয়ায়।
এ সুযোগ না থাকলে বদলে ফেলা হয় কুয়ার পানি। ডিম থেকে ফোটার ১০-১২ ঘণ্টা পর চোখ ফোটে রেণুর।
জানা গেছে, নদীতে জোয়ারের সময় ডিম ছাড়তে আসে মা মাছেরা। আর জেলেরা ডিম সংগ্রহ করতে থাকেন ভাটার সময়। এবারে রাউজানের কাগতিয়া আজিমের ঘাট, খলিফারঘোনা, পশ্চিম গহিরা, অংকুরীঘোনা, পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফারঘোনা, সর্কদা, দক্ষিণ গহিরা, মেবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিরচর এবং হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহীর ঘাট, আমতুয়া, মাদার্শাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেরা ডিম সংগ্রহ করছেন।
রাউজানের অংকুরীঘোনা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী হারাধন জলদাস ৫টি নৌকা দিয়ে আট থেকে ১০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন। আবার মদুনাঘাট এলাকার জেলে তারাশঙ্কর বলেন, 'হালদায় ডিম সংগ্রহ করতে আমরা অপেক্ষা করি বছর ধরে। এবার আমরা বাপবেটাসহ ৫ জন মিলে ডিম সংগ্রহ করেছি। কুয়ায় রেণু ফোটাতে কাজ করবেন আমার স্ত্রী রেণুবালাও।'
একুশে সংবাদ // এস .সম // ২১.০৪.২০১৮
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :