AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ফুচকা বিক্রেতা থেকে চিত্র শিল্পী আজিজ


Ekushey Sangbad

১১:৫৪ এএম, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
ফুচকা বিক্রেতা থেকে চিত্র শিল্পী আজিজ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : পেশায় ফুচকা বিক্রেতা। স্বাধীনতার পর থেকেই তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের সকল শিক্ষার্থী , অভিভাবকের কাছে আজিজ ভাই নামেই পরিচিত । শহরের বড় মাঠের পাশের একটি ছোট ফুচকার দোকান করেই যার জীবিকা নির্বাহ চলে। ঠাকুরগাঁওয়ের ফুচকা প্রেমীদের কাছের মানুষ আজিজ ভাইয়ের ফুচকা বিক্রেতার বাহিরেও আরো একটি পরিচয় রয়েছে। আর তা হচ্ছে তিনি একজন চিত্র শিল্পী। ফুচকা বিক্রি করে দিন শেষে রাতে বাসায় ফিরে সময় দেন নিজেকে। নিজের জন্যে বরাদ্দ সে সময়টুকু তিনি পার করেন কাঠ পেন্সিল দিয়ে বিভিন্ন ছবি অঙ্কন করে । যেমন নিপুন হাতে সুস্বাদু ফুচনা বানান তিনি। তেমনি মনের মাধুর্য মিশিয়ে পেন্সিলের আঁচড় দিয়ে চলেন সাদা কাগজে। ইতিপূর্বে তিনি কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে প্রায় হাজার খানেক বিভিন্ন ছবি অংকন করেছেন নিপুন হাতে ।   কিন্তু ছবিগুলো প্রদর্শনী করার ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাবে করতে পারেনি আজিজ। অবশেষে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালের সার্বিক সহযোগিতায় ভাষা আন্দোলনের মাসে বই মেলায় তার চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এতে তার দীর্ঘদিনের সুপ্ত বাসনা পূরণ হয়েছে বলে ফুচকা বিক্রেতা আজিজ জানিয়েছেন।   ঠাকুরগাঁওয়ের একুশে বই মেলায় সব বয়সের মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন তার আকাঁ চিত্র প্রদর্শনী দেখতে । আজিজের অসাধারণ প্রতিভা দেখে মুগ্ধ সাধারণ মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের মাঝে এমন প্রতিভা লুকিয়ে আছে এটা দেখেই অবাক সবাই ।   প্রতিটি মানুষের মাঝে সুপ্ত প্রতিভা থাকে। শুধু সেই প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগের প্রয়োজন হয়। কেউ হয়ত পারে আবার কেউ হয় ব্যর্থ। আর যারা পারে তাদের জীবনের গল্পটাই হয়ে ওঠে অন্যরকম। আর সেটিই প্রমান করলেন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী ঠাকুরগাঁওয়ের ফুচকা বিক্রেতা আব্দুল আজিজ। যিনি শুধুমাত্র কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে তৈরি করেন তার চিত্রকর্ম। এখন সকলের কাছে তিনি শুধু ফুচকা বিক্রেতা না একজন চিত্র শিল্পীও বটে।   ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড়মাঠের এক কোনে তার অস্থায়ী ফুচকার দোকান। ১৯৭৯ সাল থেকেই তিনি জড়িত আছেন এই ব্যবসার সাথে । কাজের অবসরে বসে বসে আঁকতেন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বিভিন্ন ছবি। তিনি এখন পর্যন্ত হাজারো ছবি এঁকেছেন শুধুমাত্র পেন্সিলের মাধ্যমে। এবারই প্রথম এত বড় পরিসরে তার ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে।   চিত্র শিল্পী আজিজ জানান,-“আমি নাইট স্কুলে পড়ালেখা করেছি। দিনের বেলা হোটেলে কাজ করে রাতে পড়তে যেতাম। বাবা যুদ্ধে মারা যান। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করত। সংসার চালাত মূলত বড় ভাই ।”   পরবর্তীতে ভর্তি হই ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে যেখানে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করি। মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হই। এরপর তিনি ঢাকায় চলে যান। পরবর্তিতে তিনি ঢাকাতে একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতেন ও রাতে পেন্সিল আর কাগজ দিয়ে ছবি আঁকতেন । ফুচকা বিক্রেতা ছবি আঁকাকে নেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল, যার দরূন নানা প্রতিকুলতা তাকে দমাতে পারেনি। দীর্ঘ ১৫ বছর ঢাকায় থাকার পর তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে ফুচকা চটপটির দোকান দেন এবং ক্ষীণ অবসরে ছবি আঁকতেন দোকানে বসেই। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ছবি আঁকার অনুপ্রেরণার কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন- “ছবি আঁকার আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। আমার বন্ধুরা ছবি আঁকা শিখত ওদের বলেছিলাম আমাকে শেখাতে। কিন্তুু ওরা আমাকে বলেছিল তুই তো পড়ালেখা জানিস না তুই আর কি আঁকবি। এই কথাটা শোনার পর আমার মধ্যে একটা জেদ সৃষ্টি হয় যে আমি দেখিয়ে দিব সেই জেদ থেকেই আমার আঁকা শুরু।   তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আসলে এ শিল্পকর্মটা আমার খুব ভাল লাগে। আমার স্বপ্ন এটা। আমি ঢাকায় এতদিন থাকলে হয়ত ভালো জায়গায় যেতে পারতাম কিন্তুু আমি পারি নি সংসারের কারণে, পরিবারের কারণে।” এখন ঢাকায় একটি প্রদর্শণী করতে পারলে আমার সব ইচ্ছে ও স্বপ্ন পুরণ হতো। বই মেলায় দেখতে আসা দর্শনার্থীরা একবার হলেও আজিজ এর চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে যাচ্ছে। চিত্র প্রদর্শনী দেখার পরে কথা হয় নাহিদ রেজার সাথে। তার কাছে চিত্র প্রদর্শনী কেমন লাগলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছোট থেকে আজিজ ভাই এর দোকানে চটপটি ফুচকা খাই। অনেক মজাদার ও সুস্বাদু তার হাতের ফুচকা কিন্তু আজকে আমি অবাক। কারণ তার চিত্রগুলো দেখার পরে মনে হয়েছে এজন্যই এত সুন্দর ফুচকা বানান তিনি।   ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, আজিজ ভাই এর প্রতিভা হচ্ছে একটি ছাই চাপা আগুন। এটা যে কোন সময় বের হয়ে আসতো। আজিজ ভাই এর মত এমন অনেক শিল্পী আছে যাদের একাডেমিক শিক্ষা নেই কিন্তু সুন্দর আর্ট করেন। আমরা চেষ্টা করবো এর পরে সকলের চিত্র গুলো তুলে ধরতে দেশের মানুষের কাছে। আজিজ ভাইকে দেখে আমরা শিক্ষা নেব যে চেষ্টা থাকলে প্রতিভা বিকশিত হবেই।   ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে ফুচকা-চটপাটি বিক্রয় করে তিনি যেমন পরিচিত হয়েছেন তেমনি ছবি আকাঁর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে প্রশংসা অর্জন তার ইচ্ছা। আর তার এই ইচ্ছা একদিন পুরণ হবে এমটাই মনে করেন ঠাকুরগাঁওবাসি।   একুশে সংবাদ // এস.বাপ্পি // ১৮.০২.২০১৮
Link copied!