AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উপন্যাস – অপরাহ্নে বিসর্জন বাকী অংশ


Ekushey Sangbad

০৭:১৪ পিএম, নভেম্বর ২, ২০১৭
উপন্যাস – অপরাহ্নে বিসর্জন বাকী অংশ

পেজ নং ১১- “প্রকৃতি নিজে কাউকে মারেনা, যাদের দিয়ে নির্মম কাজ করায়, প্রকৃতি তাদের শক্তিও দেয় নিজকে উজার করে”। প্রচন্ড আঘাতে ছোট তুল তুলে নিরীহ হরিন শাবকের মত নেতিয়ে পড়ল জয়িতা। সরু রাস্তা, গ্রামের ভিতর দিয়ে একে বেঁকে চলেছে বড় একটি বিলের মাঝ দিয়ে। পাশের জমি থেকে বেশ উচু রাস্তাটি, যেমনটি নদীর ধারের গড়ের রাস্তা। তবে আশে পাশে নদী নেই। চারিদেিক সবুজ ক্ষেত। রাস্তার ধারে একটি বট গাছ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে ভোরের আলোয় শত শত পাখি কিচিরমিচির করছে। গাছের শুকনো একটি ডালে ক্ষুধার্থ কয়েকটি কাক কর্কষ চিৎকার করছে বিরামহীন। কাক এমনি একটি পাখি যে মানুষের দুখের সাথি হয়। কোন কোন ধর্মে দুত হিসাবেও দেখা হয় কাককে। কাকের কর্কষ ডাকে জয়িতা চোখ মেলে তাকায়। উঠার চেষ্টা করে কিন্তু উঠতে পারেনা। কোমড় থেকে নিচ পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে। কোমড়ের নিচের অংশ রক্তে ভিজে গেছে। জোড়ে চিৎকার দেয় কিন্তু সে চিৎকার গোঙ্গানী হয়ে নিজের কানেই ফিরে আসে। সকালে ক্ষেতে আসা নিতিশ চন্দ্র জয়িতার গোঙ্গানীর আওয়াজ পেয়ে এদিক ওদিক তাকায়। এত সকালে ক্ষেতে শিশুর কান্না! না কোন ভূত-প্রেত! কিন্তু না, কয়েক হাত এগুতেই দেখতে পায়, ছোট্ট মেয়ে জয়িতার বিভৎস্য দৃশ্য। পড়নে সাদা স্কার্ট, কোমড় থেকে নিচের অংশ রক্তে লাল হয়ে গেছে। টিপ টিপ করে তাকায় মায়াবি চোখ দুটি, চোখের কোন বেয়ে ঝড়ছে পানি। জয়িতার আশে পাশের ফসল গুলি দুমড়ে মুছড়ে গেছে, হয়ত ছোট্ট শিশুর সম্ভ্রব রক্ষায় শেষ চেষ্টা করেছে আপ্রাণ ভাবে কিন্তু অবস্থা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে চেষ্টা ব্যর্থ করেছে কোন নরপিচাশ। নীতিশ আঁতকে উঠে, কি সর্বনাশ! কে করল এই বর্বচিত কাজ! চিৎকার দিয়ে উঠে সে। মুহুর্তে, শত শত মানুষে ভরে যায় জায়গাটিতে। এমন ভাবে জড়ো হয়, যেন মরা গরু গলাধকরনে শত শত শকুনের আগমন কারণ এসে শুধু জয়িতার চারিপাশে ভীর করে, সাহায্য করার মত কেউ যেন এখানে নেই। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা জয়িতাকে দেখে, কয়েক জন মমতাময়ী মায়ের চোখে পানি এসে যায়। উহ্ আহ শব্দ শোনা যায় অনেকের মুখে। টিভির পর্দায় হরিন শাবককে সিংহ মেরে খেতে দেখে, মানুষ হা হুতাস করে; মনে কষ্ট পায়; চোখের পানিও জমে কিন্তু হরিণের মাংস যখন রান্না করে নিজে খায়, তখন বলে আহ্ কি স্বাধ! এটাই মানুষ! ঠিক তেমনি কষ্ট, দুঃখে মর্মাহত, জর্জরিত মানুষ গুলি তামাশা দেখে। কেউ এগিয়ে দেয় না সাহায্যের হাত। মানুষ আহ উহ করতে পারে অন্যের দুঃখ দেখে কিন্তু সাহায্য করতে পারেনা। সবাই নিশ্চিত যে, শিশুটি ধর্ষিতা। ধর্ষিতা যেই হোক, সে নাপাক! অপবিত্র! সদ্য সকালে নাপাক ছুঁলে জাত চলে যাবে! মানবতার চেয়ে জাত যে অনেক বড়! জাতের দোহাই দিয়ে মানুুষ অবলিলায় মানবতাকে পদদলিত করে। পেজ নং ১২- জাত, বংশ মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন এবং খন্ড খন্ড ভাবে বিভক্ত করে আসছে কালের পর কাল! নিচু জাত, নিচু বংশ, মেথর, মুচি, ডোম, কালো, ধবল ইত্যাদি উপাধী দিয়ে মানুষের মাঝে মানুষেই তৈরী করছে দেয়ালের পর দেয়াল। এই দেয়ালেই মানুষকে সমাজের দোহাই দিয়ে মানবতাকে খর্ব করছে হরদম। রাস্তায় যদি কখনও কোন মৃত্যুপ্রায় পতিতা পড়ে থাকে; যদি পানি পানি করে মরেও যায়, তবু তাকে কেউ সাহায্য করে, কারণ সেতো নাপাক! সে বড় গোনাগার! সে নিচু জাত! পতিতাও একটি জাতের নাম, যে প্রতিনিয়তই কঠিন পাপের সাথে জড়িত! কেউ ভাবেনা, সেও একজন মানুষ! এর চেয়ে বড় পরিচয় নেই। একজন পতিতা যখন জন্ম গ্রহন করেছিল, তার বাবা মাও তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। কালের ব্যবধানে সমাজ তাকে পতিতা উপাধিতে অলংকৃত করেছে। সে মানুষ বিধায় পতিতা হয়েছে, পতিতা হবার পর মানুষ হয়নি। এই সমাজের মানুষেই তাকে পতিতা বানিয়েছে। সে কি পশুর সাথে যৌণ সঙ্গম করেছিল কোন দিন? না, করেনি। তারাই তাকে পতিতা হিসাবে চেনে বা জানে, যারা যৌণতার সুখ মন ও শরীর ভরে নিয়েছে পতিতার শরীর নিংরিয়ে। এরাই সমাজের ভদ্র মানুষ! নাপাক-গোনাগার ভেবেই সেই মানুষেই তাকে ছোঁয় না। পতিতার সাথে যৌণ সঙ্গম করার পর স্বচ্চ পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে পুরুষ পবিত্র হয় কিন্তু পতিতার শরীর হাজার বার স্বচ্চ পানি দিয়ে পরিস্কার করলেও, সে নাপাকেই থেকে যায়। ধিক এই সব মানুষদের! একই অবস্থা আজ জয়িতার। জয়িতা নামের এই ছোট শিশুটিও আজ পৃথিবীর নিকৃষ্ট অপবিত্রের, নাপাকের একজন! তাকে কেউ ছুঁেত রাজি নয়, ছুলেই জাত চলে যাবে। যে ছুঁবে, সমাজ তাকেও নিচু ভাববে। অবুঝ শিশু সাহায্যের আশায়, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। চোখের কোন বেয়ে ঝড়ে পড়ে ফোটায় ফোটায় পানি। সাহায্যকারীদের হাত সমাজ বেঁধে রেখেছে জাতের এবং ভদ্রতার শক্ত শিকলে! জায়গাটি থেকে দু-তিনশ গজ দূরে গীর্জা। গীর্জায় থাকেন ষাট বছরের বৃদ্ধা। সবাই ফাদার বলেই ডাকে। ধপধপে ফর্সা, শরীরে নূরের ঝলক। সাদা চুল কাঁধ অবধি নামানো। লম্বা লম্বা সাদা দাঁড়িতে, সৌটম্ব দেহ। ফাদার ক্রুস বিদ্ধ যীষুর সামনে প্রার্থনারত। একটি ছেলে দৌড় দিয়ে গীর্জায় প্রবেশ করেই চিৎকার দিয়ে বলল, ফাদার! ফাদার মুখ ফিরিয়ে ছেলেটির বিবর্ণ চেহারা দর্শনে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে বাছা? কোন সমস্যা? রক্ষা কর যীষূ। রক্ষা কর। ফাদার ছেলেটির কাছে ঘটনা শুনেই গীর্জা থেকে দ্রুত বের হলেন। মানবতার ফলক হাতে উপস্থিত হলেন সেখানে। সমাজের ভদ্র মানুষ গুলি ফাদারকে দেখে পেজ নং ১৩- রাস্তা ছেড়ে দিলেন। ফাদার জয়িতার সামনে এসে নতজানু হয়ে বসে আকাশের পানে চেয়ে চিৎকার দিয়ে বললেন যীষূ তুমি রক্ষা কর। জয়িতা ফ্যাল করে তাকায় ফাদারের দিকে। ফাদার দুহাত দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলেন জয়িতাকে। বললেন, মা তোর আর ভয় নেই, যীষ্যূ রক্ষা করবেন। ফাদারের চোখের কোন বেয়ে ঝড়ে পড়ে ফোটায় ফোটায় স্বচ্ছ পানি। হয়ত এই কয়েক ফোটা চোখের পানির কিবা আছে দাম! কিন্তু মানবতার কাছে অনেক দাম! একেই বলে মানবতা। মানবতার উর্দ্ধে কিছু নেই, সবই ভুল, সবই ম্যাকি। “মানব জীবন তখনই ধন্য, যখন তার জীবন দিয়ে অন্যের জীবনে সুখ আসে, মুছে দিতে পারে অন্যের দুঃখ” ফাদার মানবতার প্রতীক হয়ে আড়কোলা করে তুলে নিলেন জয়িতাকে। পাপ, পুন্ন, পবিত্র, অপবিত্রতাকে পায়ে ঠেলে দৌড় দিলেন মিশনের দিকে। মানবতাই সব, মানবতাই পরম ধর্ম। জয়িতার শরীর নিংড়ানো রক্তে ফাদারের সাদা পোষাক লাল হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলি নির্বাক তাকিয়ে থাকে ফাদারের দিকে। মনের ঘুমন্ত সুপ্ত আত্মা চৈতন্য ফিরে পায়, সবার মনকে প্রশ্ন করে, ফাদার সাধারন মানুষ গুলির উর্দ্ধে যে কাজটি করলেন, তারা কি তা পারতো না? তারাও তো মানুষ! মনুষ্য সেবাই তো পরম ধর্ম। শ্রষ্টা তো নিজেই বলেছেন, “যদি আমাকে পেতে চাও তাহলে আমার সৃষ্ট জীবকে ভালোবাস”। তিনি উল্লেখ করেননি, তার জাত কি হবে বা সে পবিত্র না অপবিত্র! ফাদার জয়িতাকে গোসল করালেন। শুইয়ে দিলেন ধপধপে সাদা চাদরের বিছানায়। জয়িতার মুখ চোখ রক্ত শূন্যতায় ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঘরটি ছেলে মেয়েতে পরিপূর্ণ। সবাই এই মিশনের বাসিন্দা। এ পৃথিবীতে নিকটতম বলতে এদের কেউ নেই। তারা একে অপরকে নিজের ভাই বোনের মতই মনে করে। আত্মীয় স্বজন বলতে এরাই একে অপরের। জয়িতার অবস্থা দেখে সবার চোখে পানি টলমল করে। “জীবনে যারা আদর সোহাগ পায়না, জীবনের সাথে যুদ্ধ করে প্রতি নিয়তই, তাদের মন স্বভাবতই শক্ত হয়” তবুও ছোট নিস্পাশ শিশু জয়িতার এই করুন অবস্থা, সবার চোখে পানি এনে দেয়। ফাদার জয়িতাকে প্রশ্ন করলেন, কেমন লাগছে মা? জয়িতা কথা বলতে গিয়ে পারলনা, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেল। ফাদার নাকের কাছে হাতের পিট রেখে কি যেন দেখলেন, এরপর তিনি বললেন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে রক্ত দিতে হবে। মাথায় সাদা স্ক্রাপ পড়া, পুরা শরীর ঢাকা পঁচিশ ছাবিশ বছরের দুজন অপরূপা মেয়ে এসে জয়িতাকে আলতো করে ধরে দৌড় দেয় হাসপাতালের দিকে। একেই হয়ত মানবতা বলে। মিশনের বাউন্ডারীর ভিতরে কয়েকটি বিল্ডিং এর পরেই হাসপাতাল। হাসপাতাল বলতে মিশনের ছেলে মেয়েদের চিকিৎসা দেবার ব্যবস্থা। পেজ নং ১৪- এখানে কোন ডাক্তার চাকুরী করেনা। সবাই স্বেচ্চা সেবক। হাসপাতালে নিয়েই ডাক্তার রক্তের গ্র“প পরীক্ষা করলেন, বি পজেটিভ। খুব সহজ লভ্য রক্ত। একশ মানুষের মধ্যে ষাট থেকে সত্তর জন ব্যক্তির মধ্যে এই রক্ত মেলে। নরম মনের মানুষ হয় এই রক্ত বহনকারী, এদের থাকে মানুষের প্রতি সহানুভুতি। এরা জীবনে কষ্ট দুঃখের মাঝ দিয়ে চলে আজীবন। জীবন বলতে যা বুঝায় তার প্রতিটি কোষে এদের বিচরণ। রক্ত দেবার জন্য বিশ থেকে পচিশ জন ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সবাই রক্ত দিতে প্রস্তুত, রক্ত দিতে পারলেই যেন জীবনের স্বার্থকতা। বিশ-বাইশ বয়সের একটি মেয়ে, নাম রেবেকা। চিকন স্বাস্থ্যের অধিকারীনি, ফাদারের সামনে এসে বলল, ফাদার আমার রক্ত নিন। আমার খুব ভাল লাগবে যদি আমার রক্তে ওর জীবন বাঁচে। ডাক্তার বললেন, তোমার রক্ত নেয়া যাবেনা মনি। কেন ডাক্তার! আমি কি মরে যাব? ডাক্তার বললেন, না তা নয় কিন্তু তোমার শরীরের অবস্থাতো ভাল না, তাই। কোন সমস্যা নেই ডাক্তার। আমি রক্ত দিবই। আমার রক্তের গ্র“প বি পজেটিব। যদি রক্ত দিতে গিয়ে আমার মরণ হয় তাহলে নিজেকে বোঝাতে পারবো, আমি একজনের উপকার করেছি। নিজের জীবন দিয়ে আরেক জনকে বাঁচিয়েছি। আর কি ক্ষমতা আছে আমার যে মানুষের সেবা করবো? এই শরীরের রক্ততো নিজে তৈরী করতে পারিনা। ডাক্তার রেবেকার মানবতার কাছে হার মানে। অল্প ক্ষনের মধ্যে রক্ত দেয়া শুরু হলো। হাসপাতালের করিডোরে সবাই বসে যিষ্যূর কাছে প্রার্থনা করে। দেখে মনে হয়, জয়িতা তাদেরই বোন। আচার্য্য এই যে, একটু আগেও জয়িতাকে তারা কেউ চিনতোনা। নিজের বোনের জন্য, নিজের মেয়ের জন্য, মা বাবাই বিধাতার কাছে এভাবে প্রার্থনা করে। ফাদার প্রার্থনা করছেন, রক্ষা কর যিষ্যু, রক্ষা কর। ফাদারের চোখ দিয়ে ঝড় ঝড় করে পানি ঝড়ে। আধা ঘন্টা পর, জয়িতা মা বলে কেঁদে উঠল। ফাদার জয়িতার কাছে দ্রুত গিয়ে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, কেঁদনা মা, কেঁদনা। ঈশ্বর তোমার সাথে আছেন। উনিই রক্ষা করবেন। পরের দিন। জয়িতার পাশে বসে ফাদার জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন লাগছে মা? জয়িতা বলল, ভাল। তোমার বাড়ি কোথায়? তোমার বাবার নাম কি? কি করেন তিনি? জয়িতার চোখ উপচিয়ে পানি পড়ে। ঠোঁঠ দুটি কয়েকবার কেঁপে উঠে, মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয়না। চোখের পানি দিয়েই জয়িতা বুঝিয়ে দিল তার বলার কিছু নেই । একুশে সংবাদ // র‌্যাক লিটন // ০২.১১.২০১৭
Link copied!