AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উপন্যাস ,অপরাহ্নে বিসর্জন


Ekushey Sangbad

১২:০২ পিএম, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
উপন্যাস ,অপরাহ্নে বিসর্জন

১.পহেলা বৈশাখ। বছরের একদিন বৈশাখী উৎসবে মেতে, হৈ চৈ, আনন্দ উল্লাস, গান, বাজনা, গায়ে বাঙ্গালী পোষাক পরিয়ে বাংলার গুনগানে ভরপুর দেশ তথা দেশের মানুষ। সেই সাথে দ্বৈত নীতি বাঙ্গালীরা মনে প্রাণে ভালবাসে, সাথে বিশ্বাসও অটুট। বৈশাখী আনন্দ, বিপরিতে ইংরেজদের তোষামদি থার্টিফাস্ট উৎযাপন, কোনটাতেই বাঙ্গালী কম যায়না! থার্টি ফাস্টে নারী কেলেঙ্কারী থেকে শুরু করে সব রকমের বেহাল্লাপনা স্থান পায় বাঙ্গালীতে! স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরিচ পানি ছিটানো, ঠান্ডার সময় ঠান্ডা পানি ইত্যাদির পরেও থেমে থাকেনা উচ্ছংখলা। পুরাতন স্মৃতি ভূলে যাওয়া বাঙ্গালীর স্বভাব। গত বছর কি হয়েছিল, পরের বছর তা মনে রাখেনা, আসলে মনে রাখেনা বললে ভূল হবে, মনে রাখতে পারেনা। থার্টি ফাস্টকে মনের মাঝে স্থান দিতে দিতে, একই অবস্থা পহেলা বৈশাখে। বাংলাকে বরণ করার নানা ছলে, কি না করছে বাঙ্গালীরা! বাস্তব সংস্কৃতিকে ভূলে যারা বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে তামাশা করে, বছরে একবার বাংলাকে স্বরন করে হাজার টাকার ইলিশ মাছ, পান্তা খেয়ে বাঙ্গালীপনা দেখায়, তাদের জন্যই পহেলা বৈশাখ! বাংলার সাধারন মানুষ, প্রতি নিয়তই বাংলাকে স্বরন করেন, বরন করেন, পরম শ্রদ্ধায়। বছরে একবার বাংলাকে স্বরন করার জন্য তারা পান্তা খায়না। প্রতি সকালে পান্তা ভাত খেয়ে চিরাচরিত নিয়মেই তারা মাঠে যায়। গ্রামের সাধারন মানুষ অতীত থেকে বর্তমান বৈশাখ, জ্যৈষ্ট, আষাঢ়, শ্রাবণ হিসাবে মাস গুনে। জানুয়ারী, ফেব্র“য়ারী মানেওনা, গুনেওনা। বাংলার প্রতিটি উৎসবই মহা ধুমধামে পালন করে গ্রামের সাধারণ মানুষ। নবান্ন উৎসব, পিঠা উৎসব, নতুন ধানের পায়েসের উৎসব, সব উৎসবই পালন করছে বছরের পর বছর। মাত্র এক দিন পান্তা ভাত, আকাশ কুশুম দামের ইলিশ মাছ খেয়ে বৈশাখ পালন করতে তারা অভ্যস্থ্য নয়, বরঞ্চ দূরদর্শনের মাধ্যমে সাধারন বাঙ্গালীরা শহুরী বৈশাখী হৈ হুল্লুর দেখে হাসে, সাথে দুঃখও পায়। প্রতি দিন যাদের পান্তা না খেলে মাঠে যাওয়া হয়না, সেই পান্তাকে আয়েশ করে টেবিল চেয়ারে বসে খাওয়া, এটা কি গ্রাম্য হত দরিদ্র ব্যক্তিদের অপমান করার সামিল নয়? গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও হাজার হাজার মানুষ যখন অভুক্ত রাত্রি যাপন করেন, সেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, বৈশাখকে বরন করার নানা ছলে। ২.আজ বাংলাকে ছোট করতে করতে এমন এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে যে, বছরকে দিনে পরিনত করা হয়েছে। পাশ্চাত্ব দেশের সংস্কৃতি থার্টি ফাস্টের মত পহেলা বৈশাখ আজ পাশ্চত্ব সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। নববর্ষ বাংলাকে বরণ করার ছলে নারী নির্যাতন, নারী পুরুষের ঢলাঢলি, যৌণ হয়রানী সহ কত রকমের বাজে সংস্কৃতি বাংলার পবিত্রতাকে খুন করছে গলা টিপে! যে সংস্কৃতিকে পৃথিবীর আপামর জনতা শ্রদ্ধা করে। যে ভাষাকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসাবে বিশ্ব স্কীকৃতি দিয়েছে, সেই বাংলা ভাষার পবিত্রতা রক্ষার নামে অপবিত্র করতে একটুও দ্বিধা করছিনা আমরা। গলা ফাটিয়ে শ্রদ্ধা জানানো যায়না, আমরা তাই করছি। বিশ্ববাসি এসব নারকীয় ঘটনা দেখে হাসেই না, বরঞ্চ ধিক্কার দেয়। ৩.নারী যেখানে মা ও বোনের সম্মানে ভূষিত, সেই মা-বোনের ইজ্জতকে নোংরামির এমন জায়গায় নামানো হয়েছে যে, ইহা যেন সম্মানের জায়গায় ছিলইনা! আজ পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছর নানা রকমের সমস্যা, বিশৃঙ্খলা, অসভ্য আচরন গুলি যেমন সবার জানা, তেমনি মিল্টনও জানে। তারপরও সুন্দরী স্ত্রী ও আদরের সন্তানের আব্দার মেটাতে মেলায় আসা। মিল্টন আর কমলার সুখী পরিবারে জয়িতা বড়, জয় ছোট। জয়িতার বয়স আট, জয় দু বছরের। “জ্ঞানী ব্যক্তি পাপি হয়, অবুঝ বা পাগল কখন পাপি হয়না”। বৈশাখী মেলায় আনন্দের চেয়ে নিরানন্দই বেশী হয়, অবুঝ নিস্পাস জয়িতাকে মিল্টন বুঝাতে পারেনি। আনন্দ এখানে হাতছানি দেয়, কষ্ট আর দুঃখ আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। ৪.রিস্কা থেকে নামতেই সুন্দরী এক মেয়ে বিলম্ব না করেই জয়িতার দুই গালে একেঁ দেয় তাল পাতার ছবি, যেন জয়িতাকে অর্ভথনা জানানোর জন্যই মেয়েটি দাড়িয়ে ছিল। মিল্টন পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে ধরে। টাকাটা হাতে নিয়ে, মুচকি হেসে অন্য একটি শিশুর দিকে এগিয়ে যায় মেয়েটি। সামনে এগুতেই প্রচন্ড ভীরে পড়ে মিল্টন পরিবার। কেন এত ভীর! এর কোন মানে নেই! মিল্টন মানে খুঁজতেও চায়না। সামনে এগুতে হবে এটাই বাস্তবতা। মিল্টনের কোলে জয়। মায়ের হাত শক্ত করে ধরে জয়িতা হাঁটছে। এক পা সামনে যায় তো, পিছনে তিন পা ফেরত আসতে হয়। উল্টা উল্টি মানব জ্যাম। গাড়ির জ্যাম হয় একই সাড়িতে। বৈশাখীর মানব জ্যাম মারাত্বক! বুঝার কোন উপায় নেই, সামনে কিভাবে যেতে হবে। তারপরও যেতে হবে বলেই ধাক্কাধাক্কি, তবে একে ধাক্কাধাক্কি না বলে যুদ্ধ বললে অযুক্তিক হয়না। দিগন্ত মেঘে ঢেকে আছে। হৈ-হুল্লুরেও আকাশের বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস গুর গুর শব্দ কানে ভেসে আসছে। দিগন্তে বিদ্যুতের ঝলকানিও চোখে পড়ে মাঝে মধ্যে। প্রায় ঘন্টা খানেক মানব জ্যাম পার হয়ে কমলা বলল, মিল্টন আমি আর পারছিনা, চল ফেরত যাই, মনে হয় বৃষ্টিও নামবে! বৃষ্টি নামলে কি হবে বল! আমার কেমন জানি ভয়ও লাগছে। মিল্টন বলল, দুর বোকা! ভয় কিসের! এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই তো আনন্দ! ঠ্যালাঠেলি, ধাক্কাধাক্কিতেই তো মজা! না হলে এত মানুষ কেন আসে, বলতে পার? মায়ের সাথে জয়িতাও আকুতি, বাবা চল, আমারও ভয় লাগছে। আমি বাসায় যাব। মিল্টন বলল, কোন ভয় নেই মা। তুমি না বলছিলে তাল পাতার নকশা করা পাখা, ঝিনুকের মালা কিনবে! না বাবা, আর একদিন। মিল্টন লক্ষ্য করে জয়িতার চোখ পানিতে টলমল করছে। মিল্টন বলল, ঠিক আছে চল। তবে বের হবো কোন দিক দিয়ে? কমলা বলল, সামনে এগুতে থাক। একটু পরেই বড় একটি মোড় পাব। ওখানে এত ভীর হবেনা, রিস্কাও পাওয়া যাবে হয়ত! মিল্টন বলল, চল। ভীর ঠেলে সামনে এগুতে থাকে তারা। কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হয় দমকা বাতাশ সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি। দমকা বাতাশে মেলার ভীর দ্বিগুন হয়ে যায়, দ্রুত প্রস্থানে মানুষ একের উপরে আরেকজন, যেমনটি বাতাশের দোলায় সোনালী ধানের শীষ একটির উপরে আরেকটি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। নিজ গন্তব্যে যাবার কোন উপায়ও নেই। ধাক্কাধাক্কিতে নিজ রাস্তা পরিবর্তন হয় বারংবার। জয়িতা মায়ের হাত আরও শক্ত করে ধরে। মেয়েদের চিৎকার ভেসে আসে। কি অসভ্য! তোদের ঘরে কি মা বোন নেই! এ্যাই ছেলে গায়ে হাত দিলি ক্যান? কে কাকে বলছে বা কে কার অন্তবাসে অথবা নিতম্বে হাত বুলিয়ে মজা লুঠছে বোঝার উপায় নেই, হয়ত মেয়েদের অন্তবাসে, নিতম্বে হাত বুলিয়ে, খামছিয়ে মজা লুঠছে কুলঙ্গার ছেলেরা। হায়রে বাঙ্গালী! হায়রে বৈশাখ, হায়রে পবিত্র নববর্ষ! মিল্টনরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, তার পাশেই কয়েকজন ছেলে ষোল-সতর বছরের এক মেয়ের পড়নের কাপড় খুলে হাজার হাজার মানুষের সামনে আনন্দ লুঠে নিচ্ছে। কারও কিছু বলার নেই, নেই বাঁধা দেবার কেউ। কি বিভৎস্য, নির্মম দৃশ্য। মিল্টনের বুকের মাঝে ধক ধক করে, সাথে আছে রূপবতী স্ত্রী আর আট বছরের মেয়ে জয়িতা। জয়কে কমলার কোলে দিয়ে জয়িতাকে নিজের কাছে নেবার চেষ্টা করে মিল্টন। প্রচন্ড ধাক্কা সামাল দিতে ব্যর্থ মিল্টনের হাত থেকে ফসকে জন সমুদ্রের স্রোতে চলে যায় জয়িতা। নির্দয় মাংশাসী প্রাণী যখন হরিণের পালে আঘাত হানে, তখন হরিন শাবক প্রাণ ভয়ে এদিক ওদিক দৌঁড়াতে থাকে, ঠিক তেমনি জয়িতা এদিক ওদিক তাকিয়ে মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদে। একুশে সংবাদ // র‌্যাক লিটন // ১৬.১০.২০১৭
Link copied!