AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ক্যাফেইন টক্সিকোলজির সাত-সতেরো


Ekushey Sangbad

১২:১৩ এএম, জুন ২১, ২০১৭
ক্যাফেইন টক্সিকোলজির সাত-সতেরো

একুশে সংবাদ : কফি, বর্তমান সময়ে দিনের শুরুর এক অপর নাম। অন্তত সমাজের উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে তো বটেই! উন্নত দেশগুলোতে কফি কোন বিত্ত মানে না। এক রকম অবাধেই বিচরণ সব জায়গায়। গরম ধোঁয়া তোলা এক কাপ কফির নামই যেন কোটি প্রাণে চাঞ্চল্য এনে দেয়। ইন্টারনেটের এই যুগে কফির উৎস ও বহুবিধ গুণের কথা এক রকম সবারই জানা। ক্যাফেইনের পাশাপাশি কফির অন্য যতগুলো উপাদান নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণার তথ্য মেলে তারা হলো ক্যাফেইক অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, কাফেস্টল, কাউয়েওল ও ফেরুলিক অ্যাসিড। বিভিন্ন গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী উপরোক্ত উপাদানগুলোর যে কার্যকারিতা মেলে তা হল- এন্টিঅক্সিড্যান্ট বা সাইটোপ্রটেক্টিভ, প্রদাহরোধী, ইমুনোমডুলেটরি, অণুজীব ধ্বংসকারী, ক্যান্সাররোধী, এন্টি-ডায়াবেটিক, মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও যকৃৎ প্রতিরক্ষাকারী। তবে অধিকাংশ মানুষই কফির স্বাদ নেয়, এর নিউরো-স্টিমুলান্ট ক্যাফেইনকে টার্গেট করেই। এটি ৯৯% বায়োএভেইলেভেল। যদিও কার্যকারিতা মাত্র ৩-৬ ঘণ্টা স্থায়ী হয়, তবে এর রয়েছে হাইড্রো ও লাইপো-ফিলিক গুণ। খুব সহজেই শরীরের বিভিন্ন সেল-মেমব্রেন (কোষ পর্দা) যেমন- ব্লাড ব্রেইন বেরিয়ার, প্লাসেন্টা, লিপিড বাই লেয়ার এমনকি মাইট্রকন্ড্রিয়াল মেমব্রেনও ভেদ করতে সক্ষম। রয়েছে বিভিন্ন সিস্টেমের সাথে ইন্টারেকশনও। আর সে কারণেই ক্যাফেইনের উপকারিতার পাশাপাশি বহুবিধ ক্ষতিকর কার্যকারিতাও দেখা যায়। এই লেখাটিতে শুধুমাত্র ক্যাফেইনের ক্ষতিকর দিকগুলোই তুলে ধরা হয়েছে। ক্যাফেইন এর মূল উৎস Coffea arabica (পরিবার- Rubiaceae)। অদ্যাবধি বিভিন্ন পরিবারভুক্ত প্রায় ৬০টি উদ্ভিদে ক্যাফেইন পাওয়া গেছে, তন্মোধ্যে cocoa beans, kola nuts, tea leaves, yerba maté, guarana berries, guayusa, yaupon holly এবং coffee beans-ই প্রধান। বাড়িতে তৈরিকৃত এক কাপ কফিতে সাধারণত ৩০ থেকে ১৭৫ মিগ্রা ক্যাফেইন থাকে। এছাড়া বাজারে যে সব ক্যাফেইন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট পাওয়া যায় তা হল– চকোলেট (১-১২০ মিগ্রা), এনার্জি ড্রিংকস (৩৩–৪০০ মিগ্রা), কার্বনেটেড বেভ্যারেজ (২২–৬৯ মিগ্রা), অ্যালকোহলিক বেভ্যারেজ (৩-৯ মিগ্রা), ফাস্ট-ফুডস (১-৪৯ মিগ্রা), ক্যাফেইনেটেড ওয়াটার (৪২–১২৫ মিগ্রা), ক্যাফেইনেটেড সফট ড্রিংকস (৩০–৪৮ মিগ্রা), ডি-ক্যাফেইনেটেড কফি (১–৫ মিগ্রা), এসপ্রেসো (৫০–১৫০ মিগ্রা), টি-ব্যাগ (২–১৩০ মিগ্রা), ব্রেওয়েড/পার্কোলেটেড, ডি-ক্যাফেইনেটেড (৩-১২ মিগ্রা) ও ইন্সটান্ট/রেগুলার ড্রিপ (৩০–৩৩০ মিগ্রা)। ক্যাফেইন ভ্যাগাল ভ্যাসোমোটরকে স্টিমুলেট করে; ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর, হার্টবিট বেড়ে যায় ও রক্তনালী সংকুচিত হয়। এটি স্টিমুলেটরি নিউরো-ট্রান্সমিটার যেমন– মনো-অ্যামাইন ও অ্যাসিটাইলকোলিন রিলিজে সহায়তা করে। অপর এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, ক্যাফেইন অ্যাসিটাইলকোলিনকে প্রতিহত করতে পারে। উল্লেখ্য, অ্যাসিটাইলকোলিনের কার্যকারিতা প্রতিহত হলে নিউরো-ট্রান্সমিশন ব্যাহতসহ পেশীর-পক্ষাঘাত, খিঁচুনি, শ্বাসনালী-সংকোচন ও শ্বাসরোধজনিত কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাছাড়া উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন (১০০০–১৫০০ মিগ্রা/দিন) কাফেইনিজম সৃষ্টি করে। প্রতিনিয়ত ক্যাফেইন ব্যাবহারে ডোপামিন রিলিজ ক্যাপাসিটি কমে যায়, ফলে শরীরে ক্যাফেইন টলারেন্স উদ্ভব হয়। এটি সরাসরি ডোপামিন রিসেপ্টর (ডি১ ও ডি২) এর সাথে বাইন্ড না করতে পারলেও এডিনোসিন রিসেপ্টর (এ১ ও এ২এ) অথবা এদের ডাইমার (এ১-ডি১, এ১-এ২ বা এ২এ-ডি২)এর সাথে বাইন্ড করে কাজ করে যেতে পারে। ক্যাফেইনের আছে ফসফোডাইএস্টারেজ, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর-আলফা ও লিউকোট্রাইন সিন্থেসিস রোধী ক্ষমতা। তাছাড়া এটি ইন্ট্রাসেলুলার সাইক্লিক-এএমপি ও প্রোটিন-কাইনেজ-এ কে এক্টিভেট করতে পারে। সর্বতভাবে ক্যাফেইন শরীরের প্রদাহ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। মূলত স্বল্পপ্রদাহ শরীরের জন্য উপকারী কেননা তা রোগ প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। উচ্চমাত্রার ক্যাফেইনের জানা ক্ষতিকর দিকগুলো হল অনিদ্রা (insomnia), ক্যাফেইন ডিপেন্ডেন্সি (মাইল্ড ২৩৫ মিগ্রা/দিন ও উচ্চ), উইথড্রল সিম্পটমস (ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ধরা, অস্বস্তি, অবসাদ গ্রস্থতা, উচ্চ রক্তচাপ ও অনিমিত বর্ধিত হার্ট রেট, অতিরিক্ত মূত্রত্যাগ ও পরিমাণ, মুড কমে যাওয়া, মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটা, ঝাপসা দেখা, পাকস্থলী ও গেঁটে ব্যথা ইত্যাদি), হাড়ের ক্ষয়, গ্যাস্ট্রিক মটিলিটি ও অ্যাসিড সিক্রেশনে ব্যাঘাত ঘটা, পানিশূন্যতা, এক্সাইটি ও প্যানিক ডিসঅর্ডার, লো বার্থ-ওয়েট, কলোরেক্টাল ক্যান্সার, ইন্ট্রা-ওকুলার প্রেসার (গ্লুকোমা রোগীদের ক্ষেত্রে) বেড়ে যাওয়া, নার্ভাসনেস, তাড়নজাত, পাল্পিটেশন, চিন্তা ও কথায় কনফিউশন, ম্যানিয়া, অনুধাবনে বাধাগ্রস্ততা, মাথাঘোরা, অবাধ্যতা, হ্যালুসিনেশন, সাইকোসিস, রাবডোমায়োলাইসিস ও অন্যান্য। এমনকি ক্যাফেইন-আধিক্যে মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে। যে সকল রোগীর কাফেইন মেটাবোলিজমে সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন লিভার সিরোসিস সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষায় এর এলডি৫০ (যে পরিমাণ ডোজ পরীক্ষাগারে ৫০% এনিম্যালকে মেরে ফেলতে সক্ষম) ধার্য করা হয়েছে ১৫০-২০০ মিগ্রা/কেজি (প্রায় ৭৫ থেকে ১০০ কাপ কফি একজন ৭০ কেজি ওজনের মানুষের জন্য)। যকৃতের সাইটোক্রোম-পি৪৫০ সিস্টেম-এর সহায়তায় ক্যাফেইনের যে প্রধান তিনটি ডাই-মিথাইল জান্থিন মেটাবোলাইট পাওয়া যায় তারা হল– paraxanthine (৮৪%), theobromine (১২%) ও theophylline (৪%)। প্রথমটির কার্যকারিতায় লাইপো লাইসিসের ফলে রক্তে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলের পরিমাণ বেড়ে যায়। উল্লেখ্য রক্তে এগুলোর পরিমাণ বেড়ে গেলে, রক্তনালীর প্রাচীরে জমে কলা-কোষের অপরিহার্য অক্সিজেন ও পুষ্টিউপাদন সরবারহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এক কথায়, ‘এথারো-থ্রম্বসিস’যা কিনা হার্টস্ট্রোকের অন্যতম মূল কারণ। অপরদিকে দ্বিতীয়টি (theobromine) রক্তচাপ কমালেও বাড়িয়ে দেয় মূত্রের পরিমাণ এবং শেষোক্তটি (theophylline) মসৃণ পেশি ও শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। তবে ১,৩,৭-ট্রাই মিথাইল ইউরিক অ্যাসিড; ১-মিথাইল জান্থিন ও ১-মিথাইল-৬-হাইড্রক্সি জান্থিন নামক অন্য তিনটি মেটাবোলাইট এর ক্ষতিকর দিকগুলো আজও জানা যায়নি। সর্বশেষ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যা বলেত হয় তা হল– ক্যাফেইন কার্ডিওমায়োসাইট হাইপারট্রপি, সেক্স-ডিপেন্ডেন্ট স্টিমুলেটরি (মহিলাদের বেশি), স্টেরইডোজেনেসিস কমিয়ে দেয়া, শুক্রাণু উৎপাদন কমিয়ে দেয়া, গর্ভজনিত ও প্রসব জটিলতা (প্রি-টার্ম বার্থ ও গর্ভপাত), এলাকাভিত্তিক ব্রেইন কার্যকারিতা, ইনসুলিন রেসিস্টান্ট, নিউরো-এন্ডোক্রাইন ডিজ-রেগুলেশনের মত মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাছাড়া, ক্যাফেইনকে একই ফার্মাকোকাইনেটিক গুণ সম্পন্ন ড্রাগের সাথে ইন্টারেকশন করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি ক্যাফেইনকে ধূমপানের সাথে সিজোফ্রেনিয়া ও অ্যালকোহলের সাথে ‘ক্যাফেইন স্টপ’(ক্যাফেইন অকার্যকারিতা) সৃষ্টি করতে দেখা গেছে। ক্যাফেইনের সাথে অন্যান্য আর যেসব ড্রাগ ইন্ট্রাকশন পাওয়া গেছে তারা হল -nicotine, oral contraceptives, antidepressant (যেমন fluvoxamine) ও চেতনা নাশক (ketamine/xylazine)। ক্যাফেইনের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় ১. কফিতে অনভ্যস্থ, ২. নিম্ন রক্ত-চাপের রোগী, ৩. হাইপার-একটিভ শিশু ও কিশোর, ৪. গর্ভবতী, প্রসুতি ও দুগ্ধ দানকারী মা এবং ৫. যারা গ্রোথ ফেইজে আছে (বিশেষ করে শিশু ও কিশোর)-এর ক্ষেত্রে। বিভিন্ন গবেষণায় ক্যাফেইনের ব্রেইন ও শরীরের ডেভেলপমেন্টে ক্ষতি সাধন (সান্টেড বা কম গ্রোথ) করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে শিশু, কিশোর ও গর্ভবতী মায়েদের ক্যাফেইন ও ক্যাফেইনেটেড প্রোডাক্ট থেকে দূরে থাকার নির্দেশ পাওয়া যায়। সুপার প্রভেদ্যতার জন্য ক্যাফেইন খুব দ্রুতই প্লাসেন্টা পর্দা পেরিয়ে মায়ের ও গর্ভের শিশুর শরীরে সমান মাত্রা অ্যাটেন করতে পারে। অপরদিকে, অন্যান্য পর্দা পেরিয়েও শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমের উপর আঘাত হানতে পারে। যে সকল নারী গর্ভবতী হওয়ার অপেক্ষায় আছে অথবা হয়েছে তাদের জন্য ক্যাফেইন এর মাত্রাকে অত্যন্ত সচেতনতার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ; কোন মতেই যেন মাত্রা ২০০ থে ৩০০ মিগ্রা/দিন এর বেশি না হয়; যদিও বেশির ভাগ গবেষণা বলছে তারও কম। কেননা ঐ সময়ে বিভিন্ন জটিলতার সাথে হরমোনাল পরিবর্তনকেই দায়ী করা হচ্ছে ক্যাফেইন এর মেটাবোলিজমকে ব্যাহত করতে। বেশির ভাগ গবেষণায়ই ক্যাফেইনকে গর্ভপাত ও ফেটাসের ওজন কমাতে দেখা যায়। এটা মূলত ক্যাফেইনের লিউটিনাইজিং হরমোন সিক্রেশনের উপর স্টিমুলেটরি অ্যাক্টিভিটির কারনেই হয়ে থাকে। কারণ মাত্রা অতিরিক্ত লিউটিনাইজিং হরমোন সিক্রেশন প্রিম্যাচিউর মেনোপোজ, গোনাডাল ডিসজেনেসিস, টার্নার সিন্ড্রোম, ক্যাস্ট্রাশন, সৈয়ার সিন্ড্রোম, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, কঞ্জেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া, টেস্টিকুলার ফেইলুরের মত ক্ষতিকর রোগের কারণ। সম্প্রতি মানুষের উপর করা এক গবেষণায় জানা গেছে, ১০০ মিগ্রা/দিন ক্যাফেইন ঘুমের জন্য কোন ক্ষতিকর নয়। তবে বয়স, শরীর ও জাতিভেদে মাত্রায় তারতম্য আসতে পারে। মজার ব্যাপার হল আমরা কেউই জানি না যে– আমাদের চা কিংবা কফি কাপে সত্যিকার অর্থে কতটুকু ক্যাফেইন আছে। কেননা কফির উপাদান সমূহের তারতম্য ও পরিমাণ র্মূলত নির্ভরশীল ১. উৎস ও পরিবেশগত, এবং ২. বয়েলিং প্রসেস (তাপমাত্রা ও সময়) এর উপর। তাছাড়া কাপের সাইজ তো রয়েছেই! একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ২১.০৬.১৭
Link copied!