আজ চট্টগ্রাম বন্দরের কারশেড উদ্বোধন
একুশে সংবাদ : অবশেষে নির্মাণের প্রায় দুই বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরের কারশেডটি আজ বৃহস্পতিবার থেকে চালু হচ্ছে। ইতিমধ্যে কারশেডটিকে কাস্টমস বন্ডেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সকাল নয়টা থেকে কারশেডটিতে আমদানিকৃত গাড়ি রাখা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় পাঁচ একর জায়গার উপর নির্মিত অত্যাধুনিক কারশেডটিতে একই সাথে ৯শ’ গাড়ি রাখা যাবে। কারশেড চালুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন কার্যক্রম আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। তবে বন্দর জেটি থেকে শেড পর্যন্ত গাড়ি আনার জন্য প্রতিটি গাড়ির উপর ট্যারিফ নির্ধারণের বিরোধিতা করেছেন আমদানিকারকরা।
বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আসা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাণিজ্যিকভাবে আমদানি শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। তখন থেকে প্রতিবছরই হাজার হাজার গাড়ি এসেছে। বর্তমানে দেশে বছরে অন্তত বিশ হাজারের মতো গাড়ি আমদানি হয়। এক সময় গাড়ি আমদানি প্রায় পুরোটাই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হলেও গত বছর তিনেক ধরে মংলার মাধ্যমে বেশিরভাগ গাড়ি আমদানি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি হলেও বন্দরের অভ্যন্তরে গাড়ি রাখার আধুনিক কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমদানিকৃত গাড়ি খোলা আকাশের নিচে রাখা হতো। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাড়ি। যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ নিত্যদিনের।
গাড়ি আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক একটি কারশেড নির্মাণ এবং তাতে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছিল বহু আগ থেকে। অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীত পাশে রাস্তার পাশে ৫ একর জমির উপর নতুন একটি কারশেড এবং অকশন শেড নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে স্টিল স্ট্রাকচারের প্রায় দুই লাখ বর্গফুট জায়গায় কারশেড নির্মাণ করা হয়। প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারশেডে ১০ সারিতে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে আটটি সারিতে ১শ’ করে ৮শ’ গাড়ি এবং অপর দুইটি সারিতে ৫০ করে ১শ’ গাড়ি রাখার স্থান তৈরি করা হয়। সর্বমোট ৯০০ গাড়ি রাখার এই কারশেডটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে।
পরবর্তীতে কারশেডের প্রবেশ পথের দুইশ’ মিটার রাস্তা নিয়ে একটি সংকট তৈরি হয়। রেলওয়ের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তাটির প্রয়োজনীয় অনুমোদন যোগাড়ের জন্যও সময় লাগে। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশ থেকে কার কেরিয়ারও আমদানি করেছে। রো রো জাহাজ থেকে গাড়িগুলোকে কার কেরিয়ারে করে শেডে নিয়ে যাওয়া হবে। সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ কারশেডটি উদ্বোধন করে। এক বছরেরও বেশি আগে গত বছরের ৭ মে কারশেড উদ্বোধনের পর থেকেই এটি পুরোদমে চালু করার কথা ছিল। কিন্তু আবারো এক বছরের বেশি সময় গত হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্ডেড এরিয়া ঘোষণা না করায় দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি ঝুলে ছিল।
অবশেষে কারশেডটিকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্ডেড এরিয়া ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কারশেডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। লোকবল মোতায়েনসহ আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয়। বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল ও চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান কারশেডটি উদ্বোধন করবেন আজ।
বন্দর জেটি থেকে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে স্টেডিয়াম সংলগ্ন কারশেডে। এজন্য প্রতিটি গাড়িতে বারোশ’ টাকা করে ট্যারিফ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গাড়ি আমদানিকারকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গাড়ি আমদানিকারক ও চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক মাহবুবুল হক চৌধুরী বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ আধুনিক কারশেড চালু করেছে এজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এক কিলোমিটার জায়গা অতিক্রমের জন্য একটি গাড়ি থেকে যদি বারোশ’ টাকা করে ভাড়া নেয়া হয় তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। তিনি বলেন, বন্দর সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। তাই এধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে না আসলে বন্দরের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ১৮.০৫.১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :