চাই বেকারত্বের অবসান
একুশে সংবাদ : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আমাদের শ্রমশক্তির একটি নূতন জরিপ করিয়াছে। ইহা আগামী ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হইবে। তবে সমপ্রতি জরিপ নিয়া অনুষ্ঠিত কর্মশালা হইতে ইহার প্রধান প্রধান দিক সম্পর্কে কিছুটা হইলেও জানা গিয়াছে। বিবিএসের এই জরিপ মতে, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৬০ লক্ষ। আর দেশে ১৫ বত্সরের ঊর্ধ্বে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে বেকার রহিয়াছেন ২৬ লক্ষ মানুষ। কেহ এক ঘণ্টা কাজ করিলে তাহাকে বেকার হিসাবে ধরা হয় নাই এই জরিপে। তবে সব মিলাইয়া বেকার সংখ্যা ৭১ লক্ষ। অন্যদিকে গত বত্সরের প্রতিবেদনে দেশের চার দশমিক তিন শতাংশ বেকার থাকিবার কথা বলা হয়। এই বত্সর তাহা নামিয়া আসিয়াছে চার দশমিক দুই ভাগে। ইহাতে আমাদের সন্তুষ্ট হইবার কথা। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলে ভিন্নকথা। সামান্য কয়েকটা পদের জন্য এখনো হাজার হাজার এমনকি লক্ষাধিক আবেদনপত্র জমা পড়ে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হইতে প্রতি বত্সরই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করিয়া বাহির হইতেছেন, কিন্তু তাহাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান মিলিতেছে না। কর্মবাজারে চাকুরীপ্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি উভয় চাকুরীতে আজ দুর্নীতি ও অনিয়ম বৃদ্ধি পাইয়াছে আশঙ্কাজনকভাবে। বর্তমানে এমন অবস্থা তৈরি হইয়াছে যে, ঘুষ ছাড়া কেহ চাকুরী পাইলে তাহাকে কোনো কোনো মহল সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও চিন্তা-ভাবনা করিতেছেন।
ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। তন্মধ্যে শিক্ষিত বেকার দুই কোটি ২০ লক্ষ। এই শিক্ষিত বেকাররা কতটা মনোকষ্টে দিনযাপন করিতেছেন তাহা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নহে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে একটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। দেশে পরিবারের সংখ্যা সোয়া পাঁচ কোটি। সেই অনুপাতে যে কর্মসংস্থান হয় নাই, তাহা কাহাকেও আর বুঝাইয়া বলিবার দরকার পড়ে না। ১০০ দিনের কর্মসৃজন কিংবা ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি আসলে বেকারত্বের প্রারম্ভিক তৃষ্ণাই মিটাইতে পারে নাই। ইহা কোনো স্থায়ী সমাধানও নহে। তাই বর্তমানে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মোট অনুমোদিত পদের বিপরীতে যে কয়েক লক্ষ পদ শূন্য আছে, তাহা সর্বাগ্রে পূরণ করিবার দাবি অন্যায্য নহে। দেশ উন্নতি লাভ করিতেছে বিধায় প্রয়োজনে সেইসব পদের সংখ্যা বাড়ানোও অযৌক্তিক হইবে না। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াইতে জ্বালানি ও অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূর-পূর্বক শিল্পোন্নয়নসহ সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি সাধন প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে সংকট থাকিবার কারণে রাশিয়াসহ বিভিন্ন নূতন নূতন দেশে প্রয়োজন শ্রমশক্তির পরিকল্পিত রপ্তানি।
আমরা যদি মধ্যম-আয়ের দেশে উন্নীত হইতে এবং তারুণ্যের আধিক্যজনিত ডিমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ড সুবিধাকে কাজে লাগাইতে চাই, তাহা হইলে ব্যাপক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করিবার কোনো বিকল্প নাই।
একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ২২.০৪.১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :