ইসলামের নির্দেশনা স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম বিষয়ে
একুশে সংবাদ : থাকে তাদের এ নৈতিক অধিকারকে পবিত্র ধর্ম ইসলাম সমর্থন করে থাকে
২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন এ স্বাধীনতা। আল্লাহতায়ালা মানুষকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। এর মধ্যে বিশেষ একটি নেয়ামতের নাম স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এর প্রমাণ মেলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানবসন্তান ফিতরাতের (প্রকৃতি) ওপর জন্মগ্রহণ করে।’ -মিশকাত
এই ফিতরাত বা প্রকৃতির মধ্যেই স্বাধীনতার মর্মকথা নিহিত। মূলত স্বাধীনতা একটি ব্যাপক প্রত্যয়, যার প্রকৃতি অবর্ণনীয়। স্বাধীনতা মানুষের অস্তিত্বে লালিত সুপ্ত প্রতিভা ও শক্তিকে ক্রমাগত সমৃদ্ধির পথে বিকশিত করতে সহায়তা করে। প্রত্যেক মানুষ চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে।
কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী শক্তির খড়্গহস্ত প্রসারের মাধ্যমে এ স্বাধীনতা প্রক্রিয়া যখন ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অথবা টিকিয়ে রাখার জন্য যুগে যুগে দেশে দেশে বিভিন্ন জাতি যুদ্ধ-সংগ্রামে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছে। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন আবাসভূমি নির্মাণের প্রয়াস পেয়েছে। যারা জানমাল বাজি রেখে স্বদেশের জন্য, মানুষের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে রত থাকে তাদের এ নৈতিক অধিকারকে পবিত্র ধর্ম ইসলাম সমর্থন করে থাকে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি। তাই তিনি মদিনাকে স্বাধীন করেছিলেন মুনাফিকচক্র এবং সুদখোর, চক্রান্তবাজ ও ইহুদিদের কবল থেকে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যে কতটা স্বাধীনচেতা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন এর পরিচয় মেলে পঞ্চম হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত খন্দকের যুদ্ধে। মদিনার ইহুদি জাতির প্ররোচনায় মক্কার কুরাইশরা যখন মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়, তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলামি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে সাহাবি হজরত সালমান ফারসির (রা.) পরামর্শক্রমে মদিনার চারপাশে পরিখা খনন করেন।
মুসলমানরা যাতে এ কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয় সে জন্য তিনি নিজেও পরিখা খননের কাজে অংশ নেন। কুরাইশ বাহিনী পরিখা পার হয়ে মদিনায় আসতে না পেরে কিছুদিন অবরুদ্ধ থাকার পর ব্যর্থ মনে মক্কায় ফিরে যায়। সে সময় এটা ছিল স্বাধীনতা সুরক্ষায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি বিস্ময়কর পদক্ষেপ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শকে অনুসরণ করে আমরাও বহু রক্ত, জীবন ও ত্যাগের বিনিময়ে শত শত বছরের অধীনতা আর গোলামির শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতার লাল সূর্য।
প্রত্যেক মানুষ চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে
মানবতার ধর্ম ইসলামে দেশকে ভালোবাসার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের কথা হলো- দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে স্বদেশপ্রেম অত্যাবশ্যক। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও স্বভাব-চরিত্রে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিনি নিজের মাতৃভূমি পবিত্র মক্কা নগরীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই স্বজাতি কর্তৃক নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বিতাড়িত হয়ে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে আফসোস করে বলেছিলেন, ‘হে আমার স্বদেশ! আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারা গৌরবের বিষয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ শিক্ষাই আমাদের শিখিয়েছেন। অষ্টম হিজরি মোতাবেক ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন বিজয়ীবেশে জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন তার স্বগোত্রীয় লোকেরা হারাম শরিফে অপরাধী হিসেবে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। এমন মুহূর্তে স্বদেশবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বিশ্বের ইতিহাসে তিনি অতুলনীয় দেশপ্রেম, উদারতা ও মহানুভবতার আদর্শ স্থাপন করেন।
যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা দেশের সীমানা রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে তাদের সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একদিন ও একরাতের সীমান্ত পাহারা ধারাবাহিকভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারারাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম।’ –সহিহ মুসলিম
অন্যত্র হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘(আল্লাহর পথে) একদিন সীমান্ত রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকা হাজার দিনের মনজিল অতিক্রম অপেক্ষা উত্তম।’ –সুনানে তিরমিজি
এছাড়া দেশপ্রেমকে জাহান্নামের রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখ করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুই ধরনের চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন কখনও স্পর্শ করবে না- এক. সেই চক্ষু যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; দুই. যে চক্ষু আল্লাহর পথে (সীমান্ত) পাহারাদারি করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয়।’ –সুনানে তিরমিজি
প্রকৃতপক্ষে দেশপ্রেম, মহত্ত্ববোধ, মাতৃত্ববোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের মহান শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করে স্বদেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে, স্বদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মকৌশল উদ্ভাবনে আত্মনিয়োগ করার শিক্ষা দেয়।
অতএব, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা, দেশকে কিছু দেওয়ার মনমানসিকতা তৈরি করা, দেশকে ভালোবাসতে শেখা। তাহলেই সুখী-সমৃদ্ধশালী, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব। এবারের স্বাধীনতা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
একুশে সংবাদ // পপি // বান // ২৭.০৩.১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :