নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বিপণন
একুশে সংবাদ : ওষুধ যেমন জীবন বাঁচায়, মান-পরিমাণ ঠিক না হলে সেই ওষুধ প্রাণ কেড়েও নেয়। রোগীর কাছে চিকিৎসক, নার্সসহ ওষুধসংশ্লিষ্ট সবার দায়বদ্ধতা এখানেই। মানুষের জীবন-মরণ যেখানে জড়িত, এর সঙ্গে কোনো আপস চলে না। সংসদীয় কমিটির সুপারিশে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ উৎপাদনের সনদই বাতিল করে দিয়েছিল, তাদেরই ওষুধ কিনেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। অর্থ ও ওষুধের পরিমাণও কম নয়। ৪৬ লাখ ভায়াল, দাম ১৮ কোটি টাকা। সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ফলাও করে পত্রপত্রিকায় এসেছে, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের কর্মকর্তাদের চোখে পড়েনি, কানে যায়নি? এতে জনগণের অর্থের অপচয় হলো, তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, কার স্বার্থে?
ওষুধ কেনার সঙ্গে জড়িত পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত কম্পানি টেকনো ড্রাগসের এতটাই হিম্মত, নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয় এবং ক্ষতিকর ওষুধই বিতরণ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সরকারি-বেসরকারি দুই মহলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিকর বলে সাব্যস্ত যেসব ওষুধ মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করাও জরুরি। ব্যবহার করলেই যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই।
গত সোমবার মানহীন বলে ২৮ কম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড, অ্যান্টিক্যান্সার ও হরমোনসংক্রান্ত ওষুধ উৎপাদন বন্ধে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য ও শিল্পসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ পাঁচজনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করতেও বলা হয়েছে। আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে এ নির্দেশ পালন করতে হবে।
দেখা গেছে, মানহীন, ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারকরা মূলত ঢাকার বাইরের জেলা বা গ্রামাঞ্চলে তাদের ওষুধ বিপণন করে থাকে। কেন্দ্রীয় কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে ওই সব এলাকার অনেক চিকিৎসকও সে খবর পান না কিংবা রাখেন না। তাঁরাও ক্ষতিকর ওষুধই সেবন করতে বলেন রোগীকে। অনেক ডাক্তার ওষুধ কম্পানিগুলো থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের কৃতজ্ঞতা থেকেও মানহীন বা ভেজাল ওষুধের নাম ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন। কম্পানিগুলোর সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেকের যোগসাজশ থাকার অভিযোগও নতুন নয়। এ-জাতীয় অনৈতিক চর্চা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। বিভিন্ন প্রশাসনিক যন্ত্র কাজে লাগিয়ে এই অধিকার নিশ্চিত করার কাজটি রাষ্ট্রের পালন করার কথা। রাষ্ট্রের হয়ে যেসব ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করবেন, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, হাসপাতাল যেখানেই তাঁরা নিয়োজিত থাকুন, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেন না।
একুশে সংবাদ // পপি // কাক // ০২.০৩.১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :