AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শিম চাষ ও এর উপকারিতা


Ekushey Sangbad

০২:১০ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
শিম চাষ ও এর উপকারিতা

একুশে সংবাদ : শিমের ইংরেজী নাম Bean। শীতকালে দেশী শিম খুবই জনপ্রিয় সবজি। শীত মৌসুমের শুরুতেই সরবরাহ কম থাকায় দাম থাকে চড়া। আমিষসমৃদ্ধ এই শিম তরকারি হিসেবে দু’ভাবে খাওয়া হয়। দেশী শিম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন সবজি। এটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং সব শ্রেণীর লোকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিমের কচি শুঁটির বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও শ্বেতসার থাকে বলে খাদ্য হিসেবে খুবই উপকারী। তা ছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ থাকে। আমাদের দেহের পুষ্টিসাধনে এসব পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মাটিঃ দোআশ ও বেলে দোআশ মাটিতে শিম ভাল ফলন হয়। জাতঃ দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি স্থানীয় শিমের জাত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাইনতারা, হাতিকান, চ্যাপ্টাশিম, ধলা শিম, পুটিশিম, ঘৃত কাঞ্চন, সীতাকুন্ডু, নলডক ইত্যাদি। বারি শিম ১, বারি শিম ২, বিইউ শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম ২, একস্ট্রা আর্লি, আইরেট ইত্যাদি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। নিচে কয়েকটি আধুনিক জাতের শিমের পরিচয় দেয়া হল- বারি শিম ১- মাঝারি আগাম জাত। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রতিটি শিমের ওজন ১০-১১ গ্রাম, শিমে ৪-৫ টি বীজ হয়, গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ টি শিম ধরে। জীবনকাল ২০০-২২০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২২ টন। বারি শিম ২- আগাম জাত। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রতিটি শিমের ওজন ১০-১৩ গ্রাম, শিমে ৪-৫ টি বীজ হয়, গাছ প্রতি ৩৮০-৪০০ টি শিম ধরে। জীবনকাল ১৯০-২১০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১০-১২ টন। বিইউ শিম ৩- সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ বেগুনি। প্রতিটি শিমে গড়ে ৫ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৭-৮ টন। ইপসা শিম ১- সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ বেগুনি। প্রতিটি শিমে গড়ে ৫ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৫-১০ টন। ইপসা শিম ২- সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ সাদাটে সবুজ। প্রতিটি শিমে গড়ে ৪ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৭-৮ টন। বীজ বপন : মাদায় সার প্রয়োগের ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় দুই-তিনটি বীজ ফাঁক ফাঁক করে ২.৫-৩.০ সেমি গভীরে বপন করতে হয়। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর প্রতি মাদায় দু’টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে তাড়াতাড়ি চারা গজায়। এক শতক বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে ৪০ গ্রাম (হেক্টরে ৫-৭ কেজি) শিম বীজের প্রয়োজন হয়। রোপনের আগে পরে করনীয় ও পরিচর্যা: আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দেশী শিমের বীজ বপন করার সময়। তবে শ্রাবণ মাস উপযুক্ত সময়। যে মাসেই বীজ বপন করা হোক, অগ্রহায়ণের শেষ বা কার্তিক শুরুর আগে কোনো গাছেই ফুল ও ফল ধরে না। ব্যতিক্রম বারমাসী জাত। দেশী শিমে যেহেতু আগাম, মাঝারি ও নাবী জাত আছে, তাই জাতের সঠিক তথ্য না জেনে চাষ করলে সময়মতো ফলন পাওয়া যায় না। দেশী শিম ক্ষেত ছাড়াও বসতবাড়ির দেয়ালের পাশে, আঙিনার ধারে ছোট মাচায়, ঘরের চালে, পুকুর ও রাস্তার ধারে এবং ক্ষেতের আইলে চাষ করা যায়। ক্ষেতে চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হয়। এর পর ১০ ফুট দূরত্বে সারি করে সারিতে ৫ ফুট পর পর গর্ত বা মাদা তৈরি করতে হয়। দেড় ফুট চওড়া ও দেড় ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে গর্তের মাটির সাথে ১০ কেজি জৈব বা গোবর সার, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে ৬ থেকে ৭ দিন রেখে দিতে হয়। এতে সার চারাগাছের গ্রহণ উপযোগী হতে পারে। অন্যান্য স্খানে লাগানোর জন্য একই রকম গর্ত ও সার ব্যবহার করতে হয়। প্রতি শতক জমিতে ৪০-৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ বপন করতে হয়। চারা গজালে ১ বা ২টি সুস্খ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। তবে বীজের স্বল্পতা থাকলে বা ভালো চারা রোপণ করতে চাইলে পলিব্যাগে বীজ থেকে চারা তৈরি করে নেয়া যায়। এতে বাছাই করা সুস্খ-সবল রোগ বা পোকামুক্ত শিমের চারা মাদায় রোপণ করা যায়। অন্য দিকে বৃষ্টির কারণে জমিতে বীজ বপন করতে না পারলে কিংবা জমিতে অন্য ফসল থাকলে সময়মতো পলিব্যাগে চারা তৈরি করা ভালো। চারা গজানোর পর গাছে শাখা-প্রশাখা না আসা অথবা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা রাখাসহ আগাছা জন্মাতে দেয়া ঠিক নয়। গাছ কিছুটা লম্বা হলে প্রথমে কাঠি ও পরে বাউনির জন্য মাচার ব্যবস্খা করতে হয়। বৃষ্টির পানি যাতে গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সে জন্য নিষ্কাশনের নালা কেটে রাখতে হয়। বৃষ্টিতে গাছের গোড়ার মাটি ধুয়ে গেলে মাটি দিয়ে গোড়ার চার দিক এমনভাবে উঁচু করে দিতে হয় যাতে পানি সহজেই গড়িয়ে যায়। এ সময়ে গাছের গোড়ার দিকের প্রথম ২ থেকে ৩টি পার্শ্ব শাখা ছাঁটাই করে দিতে হয়। এই শাখাগুলো থেকে তেমন একটা ফল পাওয়া যায় না। শিমের চারা বড় হতে থাকলে অর্থাৎ মাচায় উঠতে শুরু করলে ১ম বার ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এর পর গাছের বৃদ্ধির ধরন অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর আরো ২ বার একই হারে সার উপরি প্রয়োগ করা যায়। তবে গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বা পাতার সংখ্যা বেশি হলে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ না করাই ভালো। বীজের পরিমাণ বপন পদ্ধতি মাদা প্রতি হেক্টর প্রতি সারিতে বোনা হলে ৪-৫ টি ১৫ কেজি মাদায় বোনা হলে ৪-৫ টি ১০ কেজি জমি তৈরিঃ বেশী জমিতে আবাদ করা হলে কয়েকটি চাষ ও মই দেয়া ভাল। মাদার দৈর্ঘ্য, প্রস' ও গভীরতার আকার ৪৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। মাদার দুরত্বঃ এক মাদা থেকে অন্য মাদার দুরত্ব ৩.০ মিটার। প্রতি মাদার জন্য সারের পরিমাণ গোবর ১০ কেজি, খৈল ২০০ গ্রাম, ছাই ২ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম। মাদা তৈরি করার সময় এসব সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজালে ১৪ থেকে ২১ দিন পর পর দু’কিসি-তে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের নিয়মঃ প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ বুনতে হয়। বীজ বপনের আগে ১০-১২ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি মাদায় ২-৩ টি করে সুস'চারা রেখে বাকী চারা তুলে ফেলতে হয়। পরিচর্যাঃ কোন অবস্থাতেই গাছের গোড়ায় পানি যাতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এছাড়া গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন মাদার গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা: শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা মহা ক্ষতিকর। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকে ফুল ফুটলে থ্রিপস ক্ষতি করতে পারে। ফল পেকে এলে বিন পড বাগ বা শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় দমনের ব্যসস্থা নিতে হবে। রোগ ব্যবস্থাপনা: শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ দু’টি- মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ। পাতার রোগ : দেশী শিমের পাতায় কালো দাগ ও ফোস্কা পড়া দেখা দিলে মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। আর পাতায় হলুদ মোজাইক রোগ হলে গাছটি তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। রোগটি হয় জ্যাসিড বা সাদা মাছির কারণে। এ জন্য অন্যান্য সুস্খ গাছে ইমিডাক্লোরপিড বা ফেনথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করে জ্যাসিড বা সাদামাছি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। গোড়া ও শিকড় পচা রোগ : শিকড় পচা রোগ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে বাকি গাছে ও মাটিতে ভালো করে কার্বেন্ডাজিম- জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। শিমের গোড়া ও শিকড় পচা রোগ সাধারণত বর্ষার শুরুতে বা অতি বর্ষণের ফলে গোড়ায় পানি জমলে হয়। তবে মাঝে মাঝে আবহাওয়ার আর্দ্রতা বেড়ে গেলে ও উচ্চ তাপমাত্রায় গোড়া পচা রোগের প্রকোপ বাড়ে। গাছের বৃদ্ধির যেকোনো অবস্খাতেই এ রোগ হতে পারে। মাটির ঠিক ওপরে গাছের কাণ্ডে লালচে বাদামি দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে এই দাগ বিস্তার লাভ করে। বেশি হলে শিকড়েও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত অংশ আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়। ফলন কম হয়। কখনো কখনো গাছ মরেও যেতে পারে। চারা অবস্খায় আক্রান্ত হলে চারা মারা যায়। অন্য সুস্খ গাছে বিশেষ করে গাছের গোড়ায় কপারযুক্ত ছত্রাকনাশক বা বাড়িতে তৈরি বোর্দো মিশ্রণ ৭ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। মরিচা রোগ : দেশী শিমগাছের বয়স্ক অবস্খায় মোজাইক বা মরিচা রোগ দেখা যায়। এটি ছত্রাকঘটিত রোগ। মাঘ মাসের শুরুর দিকে বিশেষ করে এ সময় দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে বা বেশি কুয়াশা হলে এই রোগ দেখা দেয়। শিমগাছের পাতায় বিশেষ করে নিচের দিকের পুরনো পাতায়, কাণ্ডে ও ডগায় বা কখনো কখনো শুঁটিতে মরিচা রোগের আক্রমণ দেখা যায়। এর আক্রমণে ছোট ছোট বাদামি ধূসর রঙের দাগ পড়ে পাতায়। পরে দাগগুলো আকারে বাড়ে, গোলাকার বা কোণবিশিষ্ট হয় এবং গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে। শেষে বড় দাগগুলো কালো রঙে রূপান্তরিত হয়। সাধারণত দাগগুলো একত্রিত হয়ে এক জায়গায় থাকে এবং অনেক সময় পরস্পর মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। মরিচা রোগ প্রতিকারের ভালো উপায় হচ্ছে রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা। বারি ও ইপসা জাতের শিমগুলো এই রোগ প্রতিরোধী। একবার এ রোগে গাছ আক্রান্ত হলে রোগ দমন করা যায় না। গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। হলুদ মোজাইক রোগ: দেশী শিমের আরেকটি রোগ প্রায়ই দেখা যায়, তা হলো হলুদ মোজাইক রোগ। এ রোগে প্রথমে কচি পাতায় ছাড়া ছাড়াভাবে হলদে দাগ দেখা যায়। দাগগুলো আস্তে আস্তে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। হলদে হয়ে যাওয়া পাতার কিছু কিছু অংশ সবুজই থাকতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার পর গজানো নতুন পাতায় হলদে ভাব আরো বেশি দেখা যায়। কখনো কখনো পাতার বিকৃতিও ঘটে। পাতা আকারে ছোট হয় ও কিছুটা কুঁচকে যায়। এক ধরনের সাদামাছি এই রোগ ছড়ায়। যেকোনো অন্তর্বাহী কীটনাশক (যেমন-বাইফেনথ্রিন বা ইমিডাক্লোরপিড) ১ থেকে ২ মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে পোকা ও রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। এ ছাড়া রোগমুক্ত মাঠ বা গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয় পরবর্তী ফসলের জন্য। আক্রান্ত ক্ষেতের আশপাশের শিমজাতীয় সব গাছে (ফরাসি শিম, ঝাড় শিম, চওড়া শিম, চারকোনা শিম, তলোয়ার শিম, মটরশুঁটি, সয়াবিন, মেথি, খেসারিশাক, ছোলাশাক ও বরবটি) একই সাথে কীটনাশক স্প্রে করা উচিত। কীটনাশক স্প্রে করার আগে সংগ্রহযোগ্য সব ফল বা শুঁটি সংগ্রহ করে নিতে হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে গাছ থেকে কোনো ফসল সংগ্রহ করা যাবে না। জাব পোকা: দেশী শিমে জাব পোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। ফুল বের হওয়ার সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। কেরোসিন মিশ্রিত ছাই পাতায় ছিটিয়ে এই পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে গাছের গোড়া ও মাচার খুঁটি, যা মাটি সংলগ্ন থাকে সেখানেও এই ছাই ছিটিয়ে দিতে হয় যাতে পিঁপড়া খুঁটি বা গাছ বেয়ে উঠতে না পারে। পিঁপড়া জাব পোকার গা থেকে নি:সৃত এক প্রকার আঠালো পদার্থকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। তাই শিমগাছে জাব পোকা দেখা দিলে পিঁপড়াও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরপিড- জাতীয় কীটনাশক ১৫ দিন পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হয়। শুঁটির মাজরা পোকা: দেশী শিমের একটি বড় সমস্যা শুঁটির মাজরা পোকা। বাদামি রঙের পূর্ণ বয়স্ক পোকা ফুল বা কচি শিমের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বা কিড়া বের হয়ে শুঁটির ভেতরে প্রবেশ করে কচি বীজ ও শাঁস খায়। ভেতরেই মল ত্যাগ করে। এ অবস্খায় শুঁটি কিছুটা বড় হয়। কিন্তু শিমের বাণিজ্যিক মূল্য একেবারেই থাকে না। ফুলের কুঁড়িতে ডিম পাড়লে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর পুষ্পমঞ্জরি খেতে থাকে। পরে পাতায় ছোট ছোট জালের মতো তৈরি করে। পাতা, ফুল ও কচি শুঁটি দিয়ে বাসার মতো তৈরি করে সেখানে লুকিয়ে থাকে। এই পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য শস্যপর্যায় অবলম্বন করা উচিৎ। অর্থাৎ পরপর দুই-তিন মৌসুম একই জমিতে দেশী শিমের চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এতে এই পোকার জীবনচক্র বাধাপ্রাপ্ত হয়। ওই সময়ে কোনো ডালজাতীয় শস্যও চাষ করা যাবে না। কারণ ডাল শস্য এই পোকার বিকল্প পোষক। প্রতি গাছে বা প্রতি বর্গমিটারে যদি ১ থেকে ৩টি পোকার আক্রমণ দেখা যায় তাহলে ফেনিট্রোথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক (৫০ ইসি) প্রতি লিটারে ২ মিলিলিটার কিংবা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটারে ১ মিলিলিটার হিসেবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। স্প্রে করার আগে সংগ্রহ করার মতো শিম সংগ্রহ করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কোনো শিম সংগ্রহ করা উচিত নয়। শিমের পুষ্টি উপাদান : আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কচি শুঁটিতে - পানি ৮৫ গ্রাম, - খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, - আমিষ ৩ গ্রাম, - শর্করা ৬.৭ গ্রাম, - চর্বি ০.৭ গ্রাম, - খনিজ লবণ ০.৪ গ্রাম, - ভিটামিন বি-১, - ভিটামিন বি-২, - ভিটামিন সি, - ক্যালসিয়াম ২১০ মিলিগ্রাম, - লৌহ ১.৭ মিলিগ্রাম, - ক্যারোটিন ১৮৭ মাইক্রো মিলিগ্রাম এবং - আঁশজাতীয় উপাদান বিদ্যমান। পরিপক্ব শুঁটিতে পানি কম থাকে এবং কিছু উপাদান বেশি থাকে। যেমন শ্বেতসার ৬০ গ্রাম, আমিষ ২৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম, তাপশক্তি ৩৪০ কিলোক্যালরি। রোগ প্রতিরোধে শিম: সহজলভ্য সবজি শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও আমিষের একটি ভালো উৎস। অতি উপকারী এ সবজি শিম সব দেশেই জন্মে। গবেষণায় জানা গেছে, শিম অন্ত্রের ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপদানগুলোকে মানুষের শরীর থেকে বের করে দিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে সিলিকন জাতীয় উপাদান। এ উপাদান হাড়কে মজবুত করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট। এ উপাদান গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ উপকারি। শিমে থাকা ফ্ল্যাভেনয়েড শরীরে ফ্রি র্যা ডিকেলস তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সবজি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও বন্ধুর ভূমিকা পালন করে। কারণ এতে আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। মানুষের ত্বককে সজীব রাখে এর জিঙ্ক। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত শিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিম খেতে হবে। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। শিমগাছ শিকড়ের সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে মাটিকে উর্বর করে। উপকারিতা: আঁশজাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা প্রকারান্তরে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। পাকস্থলি ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়, শরীরের ভেতরের গরম ভাব দূর করে। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। মাছসহ বিভিন্ন খাবারের ফুড পয়জনিং প্রতিরোধী অ্যান্টিডোট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। সতর্কতা : শিমে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিকর সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড আছে। কাজেই শিম পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। শুকনো শিমে এ উপাদানের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই শিমের শুকনো বিচি রান্না করার সময় অবশ্যই একবার পানি পরিবর্তন করা উচিত। শিম খেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হতে পারে। ফসল সংগ্রহঃ আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফুল ধরে। ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে ফল দেয়। ফলন প্রতি শতকে ৩৫-৭৫ কেজি, হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন। দেশী শিম প্রতি সপ্তাহে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে হয়। জাতভেদে কার্তিক মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত শিম সংগ্রহ করা যায়। ভালোভাবে পরিচর্যা করা হলে শতকপ্রতি প্রায় ৪০ কেজি শিম পাওয়া যায়। আবার শুকনো শিম বা শুঁটির বীজ সংগ্রহ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বিঘা দেশী শিম চাষের জন্য পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আগাম শিম বাজারে তুলতে পারলে প্রতি কেজি কমপক্ষে ২০ টাকা হিসেবে ১ বিঘায় উৎপাদিত প্রায় ১৩০০ কেজি শিমের দাম ২৬০০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় প্রায় হাজার বিশেক টাকা লাভ হয়। তবে ভরা মৌসুমে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমে আসে এবং লাভও কমতে থাকে। একুশে সংবাদ // পপি // ১৭-০২-১৭
Link copied!