২০তম জাতীয় সম্মেলনে পদের লড়াইয়ে নবীন-প্রবীণ
একুশে সংবাদ : আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের ১৮ দিন বাকী থাকলেও ঝড়ের গতিতে শুরু হয়েছে নবীন প্রবীণদের দৌড়ঝাপ। তাদের লক্ষ্য একটাই নিজেকে ভেড়াবেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে।পদবীর আশায় হারাম করছেন রাতের ঘুম। দিন শেষে কখন রাত হচ্ছে তাও যেন টের পাচ্ছেন না তারা ।
এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে নবীন প্রবীণদের নিয়ে দলের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে।
এছাড়া, গত কমিটির অনেকেই পদ পরিবর্তনেও বেশ উঠে পড়ে লেগেছেন এবং রীতিমতো যাতায়াত করছেন দলটির প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়সহ আশপাশের চিত্রও এখন ভিন্ন। যেখানে গত কয়েক দিন আগে নেতাকর্মীদের মন জুরানো উপস্থিতি লক্ষ্য না করা গেলেও এখন বেড়েছে তাদের আনাগোনা।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার দিন দলটির ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি বসন্তের এসব কোকিলরাও পথে পথে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে।
এদিকে, সফরটি নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে নতুন নেতৃত্বের ঈঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন নেতা নির্বাচন করলে সবচেয় বেশি আনন্দিত হব আমি। আমিও চাই এ সম্মেলনে নতুনদের আগমন ঘটুক।
নেতা নির্বাচনে তৃণমূলের মতামত নেওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নেতা নির্বাচনে তাদের মতামত যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হবে।
দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এবারের সম্মেলনে তরুণ নেতাদের যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন, তাদের কেউ কেউ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। পাশাপাশি দলের সহযোগী, ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃত্বে থেকে যারা দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, নতুন মুখ হিসেবে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে টানা হবে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃত্ব, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাবেন অনেকেই।
অপরদিকে, বিগত কয়েক বছরে ছাত্রলীগ থেকে বেশকিছু নেতা বেরিয়েছেন যারা বর্তমানে কোনো দায়িত্বে না থাকায় দলের কাজে আসতে পারছেন না, তাদের কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হবে। এছাড়া সরকারের মন্ত্রিসভায় থেকে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বা সফলতা দেখিয়েছেন এমন কেউ কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন।
তবে, এবারের সম্মেলনে প্রবীণদের পাশাপাশি তরুণদের প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। দলকে আরও গতিশীল এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির পরিকল্পনা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সেই সঙ্গে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের মেধা আর উদ্যমকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের সভাপতিমণ্ডলি থেকে শুরু করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনে পুরনোদের পাশাপশি নতুনরাও স্থান পাবেন।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির দুইটি পদ ফাঁকা রয়েছে। তাছাড়া সভাপতিমণ্ডলিতে বর্তমান যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বাদও পড়তে পারেন। সভাপতিমণ্ডলিতে বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন এবং খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক শাকিল, সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, শাহে আলম, ইকবালুর রহীম, ইসাহাক আলী খান পান্না, বাহাদুর বেপারি, অজয় কর খোকন ও নজরুল ইসলাম বাবু।
এছাড়া, দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব রয়েছেন এমন কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন। তারা হলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউছার, সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
এদিকে, মন্ত্রিসভায় থাকা তরুণ নেতাদের মধ্যে নাম শোনা যাচ্ছে- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
এছাড়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সংসদীয় হুইপ মাহবুবা আক্তার গিনি, সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এ্যামিলি, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ঈসরাফিল আলম এমপি, সানজিদা খানম এমপি, মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশান আরা জাহান, বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক, প্রযাত শ্রমিক নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ হাসান রাসেল, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নূজহাত চৌধুরী, উমা চৌধুরী, জামাতুল কিবরিয়া কেয়া, কোহলি কুদ্দুস, মারুফা আক্তার পপি ও শহিদুল্লাহ কায়সারর মেয়ে শমী কায়সারের নামও শোনা যাচ্ছে।
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, সম্মেলন এসেছে তাই বিভিন্ন নেতাকর্মীর নানা জল্পনা-কল্পনা থাকতে পারে। আশা-নিরাশার বিষয়টিও নেতাকর্মীদের ভেতরে ফুটে উঠবে।
তিনি বলেন, এসবের মধ্য দিয়ে যারা যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী তারাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগে নেতা নির্বাচন হয় সম্মেলনের ভেতর দিয়ে। তাই এ দলটির নেতা কে হবেন, না হবেন সেটা আগে থেকে বলা যায় না।
তিনি বলেন, যারা যোগ্য, মেধাবী, দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন তারাই নেতা হয়ে কমিটিতে আসবেন।
একুশে সংবাদ ডটকম//এমএ//০৪-১০-২০১৬
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :