স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই , জঙ্গি পুত্র রাসেল
একুশে সংবাদ : আজিমপুর জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার নিহত তানভীর কাদেরীর ছেলে কিশোর তাহরিম কাদেরী রাসেল তার ভুল বুঝতে পেরে বিচারকের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি জানিয়েছে। তার বাবা ভুল কাজ করেছে এখন এটাও সে বুঝতে পেরেছে।
গত বৃহস্পতিবার ৩ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে কিশোর জঙ্গি রাসেল বিচারকের কাছে এ আকুতি জানায়।
রাসেল বিচারকের কাছে বলে, আমার বাবা ব্যাংকে চাকরি করতেন। মিরপুরে থাকা অবস্থায় বাবার সঙ্গে মেজর জাহিদ আঙ্কেলের পরিচয় হয়। ওই জাহিদ আঙ্কেলই আমার বাবাকে জঙ্গিপনায় নাম লেখাতে বাধ্য করেন। বাবা ও আঙ্কেল একই সঙ্গে মিরপুর এলাকায় সকাল বেলা ব্যায়াম করতেন। একই সঙ্গে তারা নামাজও আদায় করতেন। এরপর বাবা চাকরি ছেড়ে দেন। পুরো সময়টাতেই জঙ্গিপনার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আমার মা এসব ঘৃণা করতেন। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাবার অনেকবার ঝগড়া হয়েছে। মারামারিও হয়েছে। বাবা মাকে বুঝাতো যে, সাদা চামড়ার লোকেরা সবাই কাফের। তাদের মারতে পারলে বেহেস্ত ফরজ হয়ে যাবে। আর এদেশে যারা অন্য ধর্মের আছে তারা এবং যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের সবাই মুশরিক। এদেরও খতম করতে হবে। এটাই ইসলামের পথে জিহাদ। জিহাদ করতে গিয়ে মারা গেলে শহীদ হওয়া যায়।
রাসেল বলে, পরিবারের সবাই যখন জঙ্গি হয়ে যায় তখন আমিও বাবার দেখানো এবং জাহিদ আঙ্কেলদের (মারজান, বাসারুল্লাহ এবং অন্যান্য জঙ্গি) প্ররোচণায় স্কুল ছেড়ে জঙ্গিবাদে নাম লেখাই। আমাকে ট্রেনিং করানো হয়। সাহসী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন স্থানে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক অপারেশন আমাকে দেখানো হয়। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। লেখাপড়া করে বড় চাকরি করতে চাই। আমার মা ও ভাইকে পাশে পেতে চাই।
জানা যায়, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা কিশোর রাসেলকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য নানাভাবে বোঝান। এ জন্য একজন আলেমকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে এসে কিশোর রাসেলকে ধর্মের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে বোঝানো হয়। তখন সে অতীতের ভুলগুলো বুঝতে পারে। জঙ্গিপনার সকল অপকর্মের কথা পুলিশের কাছে বলে দেয় রাসেল।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, আদালতে রাসেলের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির বর্ণনা এবং গোযেন্দা পুলিশকে ১৬১ ধারায় দেয়া কথাগুলোর মিল রয়েছে। আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার পর বোঝা যাবে রাসেল আসলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চা্য় তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে সহযোগিতা করবে। তবে সেটা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতা এবং ওই ব্যক্তির নিজের ওপর। কিশোর জঙ্গি রাসেল যদি তার ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় তবে সেটা চেষ্টা করা যেতে পারে। এ জন্য কিশোর সংশোধনাগারে রেখে এ রকম চেষ্টা করার জন্য আদালতে আবেদন করা হতে পারে।
একুশে সংবাদ ডটকম//এমএ//২৫-০৯-২০১৬
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :