অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ডিজিটাল যুগেও ৭৭ বছর বয়সেও বাস-ট্রেন দেখেনি হালিমা
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা,প্রতিনিধি : স্কুলের গন্ডি না শেষ না হতেই গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের হালিমা খাতুন বিয়ে হয় বিরান বালুচর আব্দুল জলিলের । বিয়ে কাকে বলে তখনও বুঝতেন না। আর কখনও ফিরে আসতে পারেননি রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা থেকে।
তাই বড় ঘোমটা দিয়ে থাকতেন যাতে কারও চোখে না পড়েন। তবে এমন পাপ করতে রাজিও ছিলেন না হালিমা। তাই স্বামী আর গ্রামের মুরব্বীদের কথা মেনে তিনি কখনও গাইবান্ধা শহর পর্যন্ত যাননি। তবে সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছুই। তথ্য প্রযুক্তির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি হালিমার জীবন। বয়স তার ৭৭ বছর। দীর্ঘ এই জীবনে অনেক কিছু দেখলেও এখন পর্যন্ত বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ তো দূরের কথা এগুলো তিনি চোখেই দেখেননি।
অসুখ বিসুখে পল্লী চিকিৎসক আর কবিরাজদের কাছে ঝাড় ফুঁক দিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাথার ওপর দিয়ে প্লেন উড়ে যেতে দেখেছেন। কিন্তু দেখেননি স্টিমার, জাহাজ। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে নৌকা দেখেই কেটেছে ৭৭টি বছর।
শৈশবেই বউ সেজে আব্দুল জলিলের ঘরে যান। শিশু বয়সেই হালিমাকে সবকিছুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। একে একে ১৯ বার নদী ভাঙনে তার জমিজমা, বসতবাড়ি তছনছ হয়ে যায়। ১৯৮৮ সালে স্বামী আব্দুল জলিল মারা গেলে দিশেহারা হয়ে পড়েন হালিমা। ভাসতে ভাসতে এক চর ছেড়ে আরেক চরে ঠাঁই হয়েছে।
নিঃসঙ্গ হালিমা পেটের তাগিদে কাজ করেছেন মানুষের বাড়ি। তার সুখের সংসারে এখন শুধুই অভাব আর অভাব। তারপরও থেমে নেই সংগ্রামী জীবন।
সর্বশেষ ঠাঁই হয়েছিল উত্তর খাটিয়ামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অন্যের একটি জমিতে। কিন্তু পহেলা বৈশাখের আগের দিন টিনের ছাপড়া ঘরটিও সরিয়ে নিতে হয় নদী ভাঙনের কারণে।
চারপাশে নদী আর মাঝে বালুচরে হালিমার সংসার। কোনো দিন সিনেমা দেখা হয়নি। বাল্যকালে গ্রাম থেকে অনেকেই শহরে গেছেন বাস ও ট্রেনে করে। কিন্তু হালিমার ভাগ্যে তা জোটেনি।
একুশে সংবাদ /এস/৩০-০৪-১৬
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :