AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

তীব্র দাবদাহ নেই একটু স্বস্তি


Ekushey Sangbad

০৫:৪২ পিএম, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
তীব্র দাবদাহ নেই একটু স্বস্তি

একুশে সংবাদ: প্রখর রদ্দুর। কোথাও নেই একটু ছায়া । নেই একটু স্বস্তি। বাইরে বের হলেই সূর্যতাপে গা পুড়ে যাওয়ার জোগাড়। পুরোপুরি চোখ মেলে তাকানোর অবস্থাও থাকে না কখনো কখনো। রাজধানীজুড়ে এমন তাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। গা বেয়ে দরদর ঘাম ঝরছে। ভিজেপুড়ে একাকার অনেকে পানিশূন্যতায় ভুগছেন। পশুপাখির অবস্থাও ত্রাহি ত্রাহি। ঢাকায় তীব্র দাবদাহের পেছনে কি শুধুই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব? পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘আমরাও অনেকটা দায়ী এমন অনল অনুভূতিতে।’ দিন দিন নগরে কমছে গাছপালা।জলাশয় ভরাট হচ্ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে এই দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়ও বটে। গাছপালা মানুষের নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড টেনে নিয়ে অক্সিজেন ছড়িয়ে দেয় পরিবেশে। তেমনি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে জলাশয়ের ভূমিকাও কম নয়। পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে। ভূখণ্ডের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলে। ভূ-তটের গভীরের পানিও থাকে স্বাভাবিক স্তরে। কিন্তু ভূখ-ের উপরের জলাশয় কমে যাওয়ায় দিন দিন মাটির গভীরে পানির স্তরও ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে নিচে। নগরবিদরা বরাবরই বলে আসছেন ঢাকার ভারসাম্যহীন পরিবেশের জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ন। বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা এমনকি আবাসিক এলাকা, কোনোটাতেই নেই সঠিক ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার ছাপ। স্থাপনাগুলোর বেশির ভাগই তৈরি হচ্ছে খেয়ালখুশি মতো। বাতাস আসা-যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জানালা কিংবা জায়গাও রাখা হয় না। একেকটি ভবন যেন একেকটি খাঁচা। পার্থক্য শুধু লোহার খাঁচায় রাখা হয় পশুপাখি, আর কংক্রিটের খাঁচায় মানুষ। নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারপারসন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ঢাকার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন নগরবাসীকেই। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে খোলামেলা জায়গা কমছে। এখন খোলা জায়গা খুঁজে পাওয়াই দায়। এক খ- জমি পেলেই হলো, ডেভেলপাররা সুযোগ খোঁজে কখন সেখানে বড় ইমারত গড়ে তুলবে।’ ইমারত তোলার বিপক্ষে তার অবস্থান নয় জানিয়ে এই নগর গবেষক বলেন, ‘ইমারত নির্মাণে তো দোষ নেই। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমাদের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তগুলো স্পষ্ট হবে। নগরীতে ইমারত গড়ে তুললেই উন্নত হয়ে যায় না, বসবাসের পরিবেশের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। এজন্য প্রয়োজন সবুজায়ন। গাছপালা যত বেশি থাকবে নগরীর তাপমাত্রা থাকবে তত বেশি সহনীয়।উন্মুক্ত স্থানের অভাবে ভুগছে নগরবাসী বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ‘ঢাকা শহরের ভূমি ব্যবহারের কারণে তাপমাত্রার পার্থক্য এবং তপ্ত ভূখ- সৃষ্টি’ শীর্ষক এক গবেষণায় ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়নকেই দায়ী করা হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৯ সালে রাজধানীর ২৬ শতাংশ এলাকা ছিল উন্মুক্ত স্থান, ৪৬ শতাংশ এলাকা বৃক্ষরাজি দিয়ে আচ্ছাদিত আর বসতি ছিল ২৩ শতাংশ এলাকায়। ২০১০ সালে এসে দেখা যায়, রাজধানীর মাত্র ৮ শতাংশ এলাকা উন্মুক্ত আর ৩১ শতাংশ এলাকায় গাছ আছে। পক্ষান্তরে ৫৭ শতাংশ এলাকা বসতি ও অবকাঠামোয় পরিপূর্ণ। জলাশয় রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ এলাকায়। চলছে নির্মাণ, পরিবেশ যাক রসাতলে ঢাকায় ভবন নির্মাণের আগে-পরে অনেক নিয়মনীতি মানার কথা থাকলেও এসবে তোয়াক্কা করেন না কেউ। ভবন নির্মাণের সময় নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রাখা হয়। ইট, বালু, সিমেন্ট, রড কোনো কিছুই রাখা হয় না যথাযথ নিয়মে। যে কারণে বাতাসে উড়ে বেড়ায় খোলা পরিবেশে রাখা বালু, সিমেন্ট। এছাড়া ইটের খোয়া আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করে। অনেক ক্ষেত্রে মাটির সঙ্গে কংক্রিট মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে ফেলে। মাটিতে ঘাস কিংবা উদ্ভিদ জন্মায় না। ঢাকা শহরের নতুন নির্মাণাধীন ভবনগুলোর আশপাশে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ভবন নির্মাণের পর নির্মাণসামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয় না। যে কারণে পরিবেশের দূষণ এড়ানোও সম্ভব হয় না। পরিবেশ রসাতলে গেলেও ভবন মালিক কিংবা ভবন নির্মাণের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকেন তাদের কিছুই আসে যায় না। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে যেকোনো প্লটে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের চার পাশে খোলা জায়গা ছেড়ে দিয়ে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। বহুতল ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, ১৯৯৩ অনুসরণ করাও বাধ্যতামূলক। ভবনের সামনের/চারপাশের খোলা জায়গা কোনো অবস্থাতেই পাকা না করে সেখানে উপযুক্ত প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর নির্দেশনাও আছে। কিন্তু এ সব মানছে না সিংহভাগ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। গাছপালা রোপণের বিকল্প নেই ঢাকার তপ্ত পরিবেশকে সহনীয় করতে গাছপালা রোপণের বিকল্প নেই। এজন্য সরকারকে ছোট আকারে হলেও নগর বনায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, সরকার যদি ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার আগে আশপাশে গাছপালা রোপণ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি উন্নয়নের নামে গাছপালা কেটে ফেলা ঠেকাতে পারে তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য অনেকাংশে রক্ষা পাবে। কারণ, গাছ যত বেশি হবে পরিবেশ তত শীতল হবে। বাধ্যতামূলক করতে হবে বৃক্ষরোপণ নগর উন্নয়নে প্রযুক্তিনির্ভরতার সঙ্গে প্রয়োজন প্রকৃতিনির্ভরতা এবং পরিবেশবান্ধবতা। পরিবেশ ও নগরবিদরা বলছেন, প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে আবাসন বিপ্লবের নামে নগরায়ন টেকসই হবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার অনেক এলাকায় গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যে সফলতা এনেছে, তা অনুসরণ করে রাজউক ঢাকার ভবনগুলোকে ‘সবুজ ভুবনে’ পরিণত করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন রাজউকের কড়া অনুশাসন এবং প্রকৌশলী-স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদদের পরিবেশ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন। আবাসন প্রকল্পগুলোতে হাসপাতাল, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল এবং কমিউনিটি সেন্টারের কথা বলা হলেও গাছপালার কথা বলা হচ্ছে না। নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশের খোলা জায়গা গাছপালায় আচ্ছাদিত না করলে সে ভবনকে রাজউকের ছাড়পত্র না দেওয়ার শর্ত বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিটি ভবন নির্মাণের অনুকূলে ‘গ্রিন সার্টিফিকেট’ অর্থাৎ ভবনটি গাছপালাযুক্ত পরিবেশবান্ধব কি না, তা আইনে অপরিহার্য করতে হবে। এ আইন না মানলে ‘গ্রিন ট্যাক্স’ কার্যকর করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘ভবন নির্মাণ ব্যয়ের একটি অংশ পরিবেশ রক্ষার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভবনের আশপাশে খোলা জায়গা না থাকলে ছাদেও বাগান দিয়ে আচ্ছাদিত করে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব। এতে ভবনগুলো প্রচ- দাবদাহ থেকে মুক্ত ও শীতল থাকবে এবং ভবনের আশপাশে কার্বন শোষিত হয়ে নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে। গাছপালা বেষ্টিত ভবন শীতল থাকলে এসির ব্যবহার কমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক হবে। পরিবেশের প্রতি অবজ্ঞায় রাজধানী ঢাকা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বৃক্ষহীন ভবনের জঙ্গলে। একুশে সংবাদ /এস/২৩-০৪-১৬
Link copied!