AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দেখতে দেখতে আবার এলো সেই পহেলা বৈশাখ


Ekushey Sangbad

১১:২১ এএম, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
দেখতে দেখতে আবার এলো সেই পহেলা বৈশাখ

একুশে সংবাদ:কবে যে শেষ হলো বছরটা জনতেই পারলামনা বছর ঘুরেই চলে এলো পহেলা বৈশাখ। সারা বছর যেমন তেমন, অন্তত বাংলা বছরের প্রথম দিনটি কিন্তু আমরা বাঙ্গালী হয়েই উৎযাপন করতে চাই। জিন্স ফতুয়া পরা রকিং মেয়েটাও সেদিন পরে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, খোঁপায় গোঁজে ফুল, কপালে পরে টিপ। ছেঁড়া ফাটা জিন্সের সাথে চুল স্পাইক করা ছেলেটি ঠিকই পরে শুভ্র একটা পাঞ্জাবি। এই যে আমাদের বাঙ্গালিয়ানার চর্চা, নিজের সংস্কৃতির কাছে ফিরে আসা তার সবই আমাদের উৎসবপ্রীতির দিকে ইঙ্গিত করে। যেই দিনে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এমনকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে সমগ্র বাঙালী জাতি এক সুরে গেয়ে উঠি, 'এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...' , যে উৎসবে একটা আঁচড় আমরা মেনে নিই না আসুন জানি তার পেছনের গল্পটা। ফসলী সন: বাংলা বছরের এতগুলো মাস। এর মধ্যে বৈশাখকেই কেন বছরের প্রথম মাসের মর্যাদা দেওয়া হল? বিষয়টি জড়িত ছিল কৃষি ব্যবস্থার সাথে। কৃষিকার্যের সুবিধার্থেই বছর শুরু করা হয় বৈশাখ থেকে। যেহেতু তখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না তাই কৃষকদের দিনপঞ্জির হিসেবেই শুরু করা হয়েছিল বছর। শুরু মনে করা হয়, বাংলা বর্ষের প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। কিন্তু তা নয়। হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বহু আগে থেকেই বছরের এই হিসেবটি প্রচলিত ছিল। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। সম্রাটের আগমণ: কৃষকের ফসল উৎপাদনের সাথে মিলিয়ে খাজনা আদায়, তার হিসেব রাখা এবং কৃষিকাজে সহায়তা করার প্রয়াসে সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬)। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। উৎসবের প্রচলন এই দিনটিকে নববর্ষ হিসেবে পালনের প্রচলন হয় আকবরের হাত ধরেই। সেই সময় চৈত্রের শেষ দিন কৃষকরা যে করেই হোক তাদের পাওনা শোধ করতেন। ভূস্বামীরা পরদিন তাদেরকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মিষ্টি খাওয়াতেন। মেলা এবং অন্যান্য নানান আয়োজন করা হত। দিনটিকে বিশ্বাস করা হত শুভদিন হিসেবে। হালখাতা দিনে দিনে কৃষি কেন্দ্রিক থাকে না পহেলা বৈশাখ। মানুষের জীবিকায় যোগ হয় ব্যবসা। এমনকি উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে এটি। জমিদাররা ঋণ দিয়ে দিয়ে হয়ে ওঠেন মহাজন। ব্যবসায়িক লেনদেনের জালে জড়িয়ে যায় বছরের প্রথম দিনটি। যদিও উৎসব প্রিয় বাঙালি উৎসবের আমেজেই ব্যবসায়িক কাজ সেরে নেয় কৌশলে! গ্রামে-গঞ্জে, শহরে ব্যবসায়িরা তাদের নতুন পুরাতন খদ্দেরদের দাওয়াত করেন, মিষ্টি খাওয়ান, পুরাতন দেনা বুঝে নিয়ে খাতা বন্ধ করে নতুন বছরে নতুন খাতা খোলেন। দিন কখন শুরু হয়? বাংলা সনে দিন শুরু হয় কখন? এটি কি সূর্যোদয়ের সাথেই শুরু? নাকি শুরু রাত ১২ টা থেকে? এ নিয়ে অনেক মত পার্থক্য আছে। যেহেতু হিজরী চান্দ্রাসনের প্রভাব রয়েছে বাংলা সনের উপর তাই অনেকে এটাও মনে করেন যে, হিজরী পঞ্জিকানুযায়ী সন্ধ্যায় আকাশে নতুন চাঁদ ওঠার সাথে সাথে দিন শুরু হবে বা বদলে যাবে একটি বাংলা তারিখ। ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে। আজকের বৈশাখ মেলা পহেলা বৈশাখ আর মেলা হবে না, ভাবা যায়? রমণের বটমূলের বৈশাখী মেলা এখন আমাদের ঐতিহ্য। প্রতিবছর এই মেলায় হাজারো মানুষ ভীড় করে। গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় রমনার অনেকটা ঘিরে। তবু পায়ে হেঁটে ভীড়ের মাঝেই মিলিত হয় বাঙ্গালী। ছায়ানটের আয়োজনে সুরে সুরে স্বাগত জানায় বৈশাখকে। মেলা শুধু শহরে নয়, হয় গ্রামে গঞ্জেও। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগায়ক ও লোকনর্তকদের উপস্থিতি থাকে। তাঁরা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, গাজীর গান, আলকাপ গানসহ বিভিন্ন ধরণের লোকসঙ্গীত, বাউল-মারফতি-মুর্শিদি-ভাটিয়ালি ইত্যাদি আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন। লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃষ্ণ প্রভৃতি আখ্যানও উপস্থাপিত হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি মেলার বিশেষ আকর্ষণ। এছাড়া শিশু-কিশোরদের আকর্ষণের জন্য থাকে বায়োস্কোপ। বাংলাদেশের যেসব স্থানে বৈশাখী মেলা বসে সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, রংপুরের পায়রাবন্দ, দিনাজপুরের ফুলছড়ি ঘাট এলাকা, মহাস্থানগড়, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মহেশপুর, খুলনার সাতগাছি, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল অঞ্চল, সিলেটের জাফলং, মণিপুর, বরিশালের ব্যাসকাঠি-বাটনাতলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপাড়া ও মুজিবনগর এলাকা। ঢাকার নিকটবর্তী শুভাঢ্যার বৈশাখী মেলা, টঙ্গীর স্নানকাটা মেলা, মিরপুর দিগাঁও মেলা, সোলারটেক মেলা, শ্যামসিদ্ধি মেলা, ভাগ্যকুল মেলা, কুকুটিয়া মেলা এবং রাজনগর মেলা উল্লেখযোগ্য। দিনাজপুরের ফুলতলী, রাণীশংকৈল, রাজশাহীর শিবতলীর বৈশাখী মেলাও বর্তমানে বিরাট উৎসবের রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন রকম মেলার মধ্যে মজার দুইটি মেলার কথা বলব যার সাথে মিশে আছে লোককথা, বিশ্বাস। বউমেলা মূলত কুমারীদের জন্য আয়োজিত মেলা, তবে বিবাহিতা নারীরাও আসেন এবং মনোকামনা পূরণের জন্য প্রার্থণা করেন। ঈশা খার সোনারগাঁও এ আয়োজিত হয় এই মেলা। বলা হয়, এটি ১০০ বছর পুরোনো। ৫ দিন ব্যাপী চলে মেলাটি। ঘোড়ামেলা এ ছাড়া সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয়। এটির নাম ঘোড়ামেলা। লোকমুখে প্রচলিত যামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ দিতেন এবং তিনি মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে স্মৃতিস্তম্ভে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট নতুনকে বরণ করতে আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। তারা তৈরি করে মুখোশ, সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এমন সব প্রানীর প্রতিকৃতি। তাদের প্রতিকৃতিতে কখনো কখনো উঠে আসে রাজাকারের ফাসির দাবি, কখনো পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা। পহেলা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। আদিবাসীদের বর্ষবরণ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উৎসব পালনের রীতি আছে। ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের উৎসবের নাম বিজু উৎসব। বর্তমানে তিনটি জাতিসত্তা একত্রে এই উৎসবটি পালন করে। যৌথ এই উৎসবের নাম বৈসাবি উৎসব। এই উৎসবের নানা দিক রয়েছে, এর মধ্যে একটি হলো মার্মাদের পানি উৎসব। একুশে সংবাদ /এস/১৪-০৪-১৬
Link copied!