AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নড়াইলে এক দশকে কৃষিজমি কমেছে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার একর


Ekushey Sangbad

১২:২৬ পিএম, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
নড়াইলে এক দশকে কৃষিজমি কমেছে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার একর

নড়াইল প্রতিনিধি :  নড়াইল একটি কৃষিপ্রধান জেলা। বরাবরই এ জেলায় উদ্বৃত্ত ফসল উত্পাদিত হয়। স্থানীয় চাহিদা মেটানোসহ বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বসতবাড়ি, মত্স্য ঘের, ইটভাটা, বিভিন্ন স্থাপনা এবং নদীভাঙনের কারণে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে ২১ হাজার ৩০১ একর। পরিকল্পিতভাবে ভূমি ব্যবহার করা না হলে ভবিষ্যতে কৃষিজমির সংকট দেখা দিতে পারে। স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উত্পাদনও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলায় এখন মোট আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার ৮০৭ হেক্টর। কিন্তু এর মধ্যে পতিত জমির পরিমাণ কত, সে সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। কিন্তু জেলায় এখন কৃষিজমির উপর বসতবাড়ি, মাছের ঘের, ইটভাটা এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারিভাবে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তাছাড়া নদীভাঙনের কারণে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার ঘটনাও থেমে নেই। সব মিলিয়ে গত এক দশকে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে ২১ হাজার ৩০১ একর। সূত্রে আরো জানায়, সরকারিভাবে দুটি পিকনিক স্পটের জন্য ২১ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরো ৩৮২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। তাছাড়া গত এক দশকে চার হাজার ৯৬৯ একর কৃষিজমিতে বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। ৬০০ একর কৃষিজমির উপর ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। ইটের কাঁচামাল হিসেবে আরো সাত হাজার একর উর্বর কৃষি জমির টপসয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। চার হাজার ৩০০ একরে মত্স্য ঘের গড়ে তোলা হয়েছে। আর নদীভাঙনের কবলে পড়ে চার হাজার ৫০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক দশক আগে নড়াইলে জনসংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৭০ হাজার ৩২০ জন। এখন জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৪৫ জন। একই সঙ্গে ছোট পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। গড় চার সদস্যের একটি পরিবারের জন্য বসতবাড়ি প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে গত এক দশকে জেলায় ২৭ হাজার ৬০৬টি বসতবাড়ি তৈরি হয়েছে। এসব বাড়ির ৯০ শতাংশই আবার গ্রামে। বসতবাড়ি নির্মাণে চার হাজার ৯৬৯ একর কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আট বছর আগে যে জমিতে ধান, পাট ও রবিশস্য উত্পাদন হতো, সেখানে এখন বসতবাড়ি। কৃষি জমির উপর বিলপাড়া, নতুনপাড়া, চরপাড়া, হঠাত্ পাড়াসহ নতুন নতুন বসতি অঞ্চল গড়ে উঠেছে। কোনো এলাকায় একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ হলেই সেখানে দ্রুত আরো নতুন বাড়ি ও বসতি গড়ে উঠছে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে জমির দাম কম হওয়ায় কৃষিজমিতে বসতি গড়ে ওঠার হ্রার বেড়েছে বলে তারা জানান। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা যায়, গত এক দশকে নড়াইলের তিন উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রেললাইন স্থাপনের জন্য প্রায় ৪০০ একর অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যার প্রধান অংশই ফসলি জমি। এছাড়া গত এক দশকে নড়াইলে চার হাজার ৩০০ একর কৃষিজমির উপর প্রায় দুই হাজার নতুন মত্স্য ঘের তৈরি হয়েছে। গত ১০ বছরে ৬০০ একর জমিতে প্রায় দেড়শ ইটভাটা তৈরি হয়েছে। ভাটার কাঁচামাল হিসেবে প্রতি বছর ৭০০ একর জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। গত এক দশকে প্রায় সাত হাজার একর কৃষিজমির মাটি কাটা হয়েছে। জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় রয়েছে মধুমতি নদী। তার দুই পাড়ে রয়েছে ৭৬টি গ্রাম। এর মধ্যে ৫৪টি গ্রাম ভাঙনকবলিত। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, ফসলি জমির উপর ইটভাটা করা, তার উপরি ভাগের মাটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করার হ্রার বেড়েছে। ফলে ওই সব জমিতে এখন ফসল উত্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া কৃষিজমি ব্যবহারের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি ও কার্যকর করা দরকার। অপরিকল্পিতভাবে বসতি স্থাপন করার ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা এবং মধুমতির ভাঙন রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া কৃষিজমি আরো হ্রাস পাবে বলে তিনি জানান। জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ জানান, ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালে কর-সংক্রান্ত নীতিমালা থাকলেও ভূমি ব্যবহার নীতিমালা নেই। ফলে মালিক তার প্রয়োজনে যে কোনোভাবে জমি ব্যবহার করতে পারেন। ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আইনগতভাবে বাধা দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। তবে কৃষিজমিতে বসতি স্থাপনসহ এর অবাধ ব্যবহারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করবেন। সবার মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা দরকার বলে তিনি জানান।
Link copied!