এই শীতে ঘুরে আসুন জাফলং
সিলেট ভিউ প্রতিবেদন: ওপারে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়, এপারে নদী। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলছে ঝর্ণা, আর নদীর বুকে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের নুড়ি পাথর। দূর থেকে তাকালে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে নরম তোলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য আর কোথায় পাবেন, জাফলং ছাড়া? এখানেই শেষ নয় সমতল চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, পানের বরজÑ কী নেই জাফলংয়ে! সিলেটের জাফলংকে তাই বলা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি। প্রকৃতি কন্যা নামেও রয়েছে আলাদা পরিচিতি। প্রকৃতি যেনো নিজ হাতে সাজিয়েছে ভারতের সীমান্তঘেঁষা দেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের এই জনপদকে। জাফলংয়ের সৌন্দর্য্য দেখতে তাই প্রতিবছরই প্রচুর সংখ্যক পর্যটক ভিড় করেন এখানে। ঋতুবৈচিত্র্যের সাথে জাফলংও তার রূপ বদলায়। সৌন্দর্য্যে আসে বৈচিত্র্যতা। বর্ষায় গেলে এখানে দেখা যাবে ওপারের পাহাড় থেকে নেমে
আসা অগনিত ঝর্ণা। সবুজের বুকে নেমে আসা ঝর্ণাধারায় সূর্যের আলোর ঝিলিক ও পাহাড়ে ভেসে বেড়ানো মেঘমালা মন্ত্রমূগ্ধ করে রাখে পর্যটকদের। আবার শীতে অন্য রূপে হাজির হয় জাফলং। চারিদেকে তখন সবুজের সমারোহ, পাহাড় চূড়ায় গহীন অরণ্য। ফলে শীত এবং বর্ষা সব সময়েই বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে জাফলং। জাফলংয়ের বুক চিড়ে বয়ে গেছে দুই নদী। ধলাই ও পিয়াইন। এই নদী দুইটি অন্যন্যতা এনে দিয়েছে জাফলংকে। ধলাই ও পিয়াইনের স্বচ্ছ জলে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় নানা জাতের ছোট মাছ। দুই নদীর পানির নিচ থেকে ডুব দিয়ে হাজার হাজার শ্রমিকের পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও মুগ্ধ করে পর্যটকদের। নদীর পানিতে নারী-পুরুষের এই ‘ডুবোখেলা’ দেখা যায় ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি।
সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর উপরে দুই পাহাড়ের মধ্যখানে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে তুলেছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য। পাহাড়, পানি, পান, পাথর, ঝর্ণা সবমিলিয়ে জাফলং যেনো এক রূপকথার রাজ্য। নাগরিক জঞ্জাল আর কোলাহল ছেড়ে দু’দণ্ড শান্তি খুঁজে নিতে তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও দলবেঁধে জাফলংয়ে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা। ভাড়া নৌকায় পিয়াইন ও ধলাইর বুকে ভেসে বেড়ান তারা। পাহাড় আর নদীতে সীমাবদ্ধ নয় জাফলংয়ের সৌন্দর্য্য। জাফলংয়ের সৌন্দর্য্যে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়াদের গ্রামকে বলা হয় পুঞ্জি। এই পুঞ্জিগুলোতে গেলে দেখা যাবে ৩-৪ ফুট উঁচুতে বিশেষভাবে তৈরি খাসিয়াদের
ঘর। প্রতিটি বাড়িতে সৃজিত পানবরজ। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা গাছ বেয়ে বরজ থেকে পান পাতা সংগ্রহ করেন। আর বাড়ির উঠোনে বসে নারী সদস্যরা পান পাতা ভাঁজ করে খাঁচা ভর্তি করেন বিক্রির জন্য। পান পাতা সংগ্রহ ও খাঁচা ভর্তি করার অভিনব দৃশ্য পর্যটকদের নজরকাড়ে। পানবরজ ছাড়াও খাসিয়া পল্লীতে দেখা যাবে কমলা বাগান। কাঁচা-পাকা কমলায় নুয়ে আছে বাগানের গাছ। সংগ্রামপুঞ্জির রাস্তা ধরে আরেকটু এগুলো দেখা যাবে দেশের প্রথম সমতল চা বাগান। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীন নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে। তারপরও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পতিত পড়ে রয়েছিল। ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন। পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকায় গড়ে উঠে নতুন জনবসতিও। আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি
প্রকৃতিপ্রেমীরাও ভিড় করতে থাকেন জাফলংয়ে। একসময় দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয় জাফলং। যেভাবে যাবেন জাফলং : সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং এর অবস্থান। সিলেটে থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা বা লেগুনায় যাওয়া যায় জাফলংয়ে। জাফলং যেতে জনপ্রতি বাস ভাড়া পড়বে ৮০ টাকা। যাওয়া আসার জন্য মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকা। সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। সিলেট শহরের যেকোনো অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যাবে জাফলংয়ে। আর জাফলংমুখী বাস ছাড়ে নগরীর শিবগঞ্জ থেকে। প্রতি এক ঘন্টা পরপর পাওয়া যাবে বাস। থাকা খাওয়া : জেলা পরিষদের বাংলো ছাড়া জাফলংয়ে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে পর্যটককে থাকতে হবে সিলেট শহরে। আর জাফলং যাওয়ার সময় খাবার সঙ্গে করে নিয়ে গেলেই ভালো হয়। কেননা খাসিয়া আদিবাসী গ্রাম সংগ্রামপুঞ্জিতে একমাত্র ক্যাফে সংগ্রাম ছাড়া জাফলংয়ে নেই কোনো ভালোমানের খাবার রেস্টুরেন্ট। জাফলংয়ের জেলা পরিষদে থাকতে চাইলে সিলেট আসার আগে ফোনে রিসোর্টটি বুকিং নিতে হবে। তবে সিলেটে শহরে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। সকল মানের হোটেলই রয়েছে এখানে।
জাফলং থাকার তেমন বেশি সুব্যবস্থা জাফলং এ নাই। তবে যে কয়টি ব্যবস্থা আছে তার মধ্যে সিলেটের তামাবিল ও জাফলং-এ রয়েছে সুন্দর আবাসন ব্যবস্থা বিজিবি সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র গেষ্ট হাউস, তমাবিল , সিলেট : বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড পরিচালিত এ গেষ্ট হাউসটিতে আগে বুকিং দিয়ে থাকা যায়।অসাধরন সুন্দর পরিবেশে স্থাপিত এ গেষ্টহাউসটির নিরাপত্তা প্রশ্নাতীত।মেঘালয়ের পাহাড়শ্রেনীর পাদদেশে অবস্থিত এ রিসোর্টটির রুমের ব্যালকনীতে বসলে ৩ টি ঝর্না দেখতে পাওয়া যায়।আর বিশাল পাহাড়ের গায়ে মেঘের খেলাতো আছেই।এছাড়া সামান্য দুরত্বে জাফলং ঘুরে আসা যায়, আধ ঘন্টা হেটে চলে যাওয়া যায় ভারতে সীমান্ত এলাকায় ঝর্নার একদম কাছটায়।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গেষ্ট হাউজটির ভাড়া প্রতি রুম ৩,০০০ টাকা প্রতি রুম।এক রুমে ২ জন থাকার ব্যবস্থা তবে চাইলে ৪ জনও থাকা যায়।কতৃপক্ষের কোন মানা নেই।আর ডাইনিং এ খাবার মান?অসাধারন। দাম? রেষ্টুরেন্ট এর অর্ধেক।এটা বুকিং দিতে হলে এ নম্বরে ফোন করুন : ০১৭৬-৯৬১৩০৭০ (মোজাম্মেল)
এছাড়া জাফলংয়ে থাকার জন্য রয়েছে পর্যটন মোটেল, জাফলং। পাহাড়ের পাদদেশে ছায়াশীতল সুনিবিড় পরিবেশে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নবতম সংযোজন এই জাফলং মোটেল। জাফলং মোটেলের কক্ষ ভাড়া ১,৮০০/- - ২,০০০/- টাকার মধ্যে। এটি বুকিং দিতে হলে যোগাযোগ করুনঃ ০২-৯৮৯৩৭১০ (বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সেন্ট্রাল রিজার্ভেশন)
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :