আজ রুনা লায়লার শুভ জন্মদিন ...
একুশে সংবাদ . কম : সেই ১৯৬৫ সাল থেকে এখনো সমানতালে গান করে যাচ্ছেন উপমহাদেশের বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সঙ্গীতের জন্য তিনি বিখ্যাত। এছাড়া দেশের বাইরে গজল গায়িকা হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তাঁর সুনাম আছে। প্রখ্যাত এ সঙ্গীতশিল্পীর জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটে তার জন্ম। বাবার বাড়ি রাজশাহী। রুনার বাবার নাম এমদাদ আলী এবং মায়ের নাম অনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা। রুনার মাও সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সুবীর সেন ছিলেন তার মামা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া চলচ্চিত্রের গানে পাঁচ দশক ধরে কণ্ঠ দিয়ে যাচ্ছেন। রুনা লায়লার গানের রূপ, রস, গন্ধ সববয়সী শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। আর তার গানের তালে তালে নৃত্য, হাতের ভঙ্গিমা ও ফ্যাশনে তিনি তৈরি করেছেন স্বতন্ত্র। ছোটবেলায় কত্থক, ভরতনাট্যম ও কথাকলি নাচ শিখেছেন। শৈশব কেটেছে পাকিস্তানের করাচিতে। ১৯৫৫ সালের মার্চে রুনার যখন আড়াই বছর বয়স, তখন তার বাবা রাজশাহীর সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী বদলি হয়ে গেলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে। বাবার চাকরি সূত্রে তাকে সেখানে অনেকটা সময় পর্যন্ত থাকতে হয়েছে। তবে মাঝে-মধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় আসতেন। অজস্র গান ও অজস্র রেকর্ডের মাঝেও রুনা লায়লা তার শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পেলেন প্রথম বিভাগ, ১৯৭০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দ্বিতীয় বিভাগে। এদিকে রুনা লায়লার জন্মদিন ১৭ নভেম্বর। কিন্তু শুভাকাঙ্ক্ষি ও ভক্তদের অনেকে তাকে ১৫ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই ভুল করে ভেবেছিলেন সোমবারই প্রিয় শিল্পীর জন্মদিন! রুনা এখন লন্ডনে কন্যাসন্তান তানি লায়লা ও দুই নাতির কাছে বেড়াচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে রোববার তিনি লিখেছেন, ‘আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তদের কাছ থেকে জন্মদিনের আগেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেয়েছি। সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আমার জন্মদিন ১৭ নভেম্বর। তবুও সবাইকে শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ।’ পাঁচ দশকের সংগীত জীবনে লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক- সব ধাঁচের গানই গেয়েছেন রুনা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় তার কণ্ঠে গান শোনা গেছে। এ পর্যন্ত গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সুরকার নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে তিন দিনে ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান রুন লায়লা। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার। ছবিগুলো হলো- ‘দি রেইন’ (১৯৭৬), ‘যাদুর বাঁশী’ (১৯৭৭), ‘অ্যাকসিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪), ‘তুমি আসবে বলে’ (২০১২) এবং ‘দেবদাস’ (২০১৩)। বাংলাদেশের ছবিতে রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান হলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। লাহোরে থাকাকালেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে দেশে স্থায়ীভাবে চলে আসার পর প্রথম তিনি গেয়েছেন সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। বলিউডের বেশ কয়েকটি ছবিতে গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। সর্বশেষ গেয়েছিলেন ১৯৯০ সালে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অগ্নিপথ’ ছবির ‘আলীবাবা মিল গ্যায়া চল্লিশ চোর সে’ গানটি। বলিউডে তার গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘ও মেরা বাবু চেইল চেবিলা’। পাকিস্তানের ‘মান কি জিত’ (১৯৭২) ছবির এ গানটি ব্যবহার হয় বলিউডের ‘ঘর দুয়ার’ (১৯৮৫) ছবিতে। রুনা লায়লা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি ‘শিল্পী’ নামক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন রুনা লায়লা। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কারে ভূষিত করে। সঙ্গীতের জন্য তিনি নিজের দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। রুনা লায়লা ভারতে ‘সায়গল পুরস্কার’ পেয়েছেন। পাকিস্তানে দু’বার নিগার পুরস্কার, দু’বার গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার এবং ‘জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন।
একুশে সংবাদ ডটকম///এম এম//১৭-১১-২০১৫
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :