AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইসলামী ব্যাংকের কাছে ‘অজ্ঞাত’ অর্থের হিসাব চেয়েছে দুদক


Ekushey Sangbad

০৯:৪৫ এএম, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
ইসলামী ব্যাংকের কাছে ‘অজ্ঞাত’ অর্থের হিসাব চেয়েছে দুদক

একুশে সংবাদঃ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে (ওবিইউ) জমা হওয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ‘অজ্ঞাত’ ২ হাজার কোটি টাকার হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৩ সালে কোন উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ এ অর্থ অফশোর ব্যাংকিংয়ে জমা হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দিতে বলেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি। সম্প্রতি কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে নথিপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র নোটিশের বিষয়ে নিশ্চিত করে। এদিকে দুদকের নোটিশে তোলপাড় শুরু হয়েছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে। নোটিশ পাওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের ঊর্দ্ধতনরা কয়েক দফা মিটিং করেছেন নোটিশের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নথি দেওয়ার বিষয়ে। দুদক সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের ওবিইউ বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে (বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং, যার হিসাব সম্পূর্ণ আলাদা) ২ হাজার কোটি টাকার এক অজ্ঞাত তহবিল রয়েছে। অজানা উৎস থেকে এ তহবিলের টাকা ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিংয়ে জমা হয়েছে। ওখান থেকে ওই টাকার একটি অংশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে। শাখা থেকে ওই টাকার একটি অংশ বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়াটি এমনভাবে করা হয়েছে যাকে মানি লন্ডারিংয়ের ভাষায় ‘লেয়ারিং’ বা জটিল লেনদেনের মাধ্যমে টাকার উৎস গোপন করার মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ কারণে ঘটনাটি অনুসন্ধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ চলতি বছরের মার্চে দুদকে পাঠায়। এরপর দুদক অনুসন্ধানের জন্য তা আমলে নেয়। বর্তমানে দুদকের একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম এ অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের পদস্থ কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে নোটিশ পাঠায় দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। নোটিশে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকের এমডিকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওযার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে ২০১৩ সালে ইসলামী ব্যাংক এর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বা ওবিইউ’তে যে ২ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে সেই টাকা কোন উৎস থেকে জমা হয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র দিতে বলেছে দুদক। আরও যেসব তথ্য এমডি’র মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ’র কাছে চেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, অফশোর ব্যাংকি ইউনিটে জমাকৃত এ টাকা থেকে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর যে সব শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে সেই স্থানান্তর সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্রের কপি। একইভাবে বিভিন্ন শাখায় ওই টাকার একটি অংশ যেসব গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে তাদের হিসাবের অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্রের কপি। ব্যাংকের এমডি’র কাছে পাঠানো নোটিশে আরও যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল কর্তৃক ইসলামী ব্যাংক এর অফশোর ব্যাংকি ইউনিটে ওই টাকা জমার বিষয়ে যে তদন্ত করা হয় সেই তদন্ত প্রতিবেদনের কপি। ইসলামী ব্যাংক এর ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন। একই বছরের ব্যালান্স শিট। এছাড়া ২০১৩ সালের ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর ব্যালান্স শিটে কভার ফান্ড হিসেবে ৪৩৯ কোটি টাকার উৎস ও বর্তমানে সেই টাকা কোথায় কিভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিতেও বলা হয়েছে। দুদকে রক্ষিত তথ্যে উল্লেখ রয়েছে, ২০১৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে ২ হাজার কোটি টাকার ‘অজ্ঞাত’ তহবিলের তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল। এ তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল তদন্ত করে। তদন্তে অর্থের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এবং ইসলামী ব্যাংকের ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, এ অর্থের সত্যতা পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাইলে ইসলামী ব্যাংক যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ব্যাংকের পরিদর্শকরা। ওই তহবিলের লেনদেনের বিষয়ে আরও বিশদ তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ থেকে ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (এফআইইউ) অনুরোধ জানায়। এফআইইউ থেকে পরে এটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকে আসে। সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনের কোথাও পরিষ্কারভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, মূল ইসলামী ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করা হয়নি। তারপরও অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কীভাবে মূল প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা গেল- এ প্রশ্ন এখন দেখা দিয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী এক স্থানে ধার হলে অন্য স্থানে সম্পদ হিসাবে থাকতে হবে। সম্পদই যদি না থাকে তাহলে ধার দেয়া হবে কোথা থেকে। যেটি ঘটেছে ইসলামী ব্যাংক ও তাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মধ্যে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ওই ১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা কোথা থেকে এসেছে। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংকের ব্যালান্স শিটে প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকার অন্যান্য দায় দেখানো হয়েছে কভার ফান্ড (বিভিন্ন দায়ের বিপরীতে রাখা তহবিল) হিসাবে। এসব অর্থের উৎস নিয়ে এখন দুদক অনুসন্ধান করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ তলবি নোটিশের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নথি হাতে পাওয়ার পরই দুদক এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া শুরু করবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, অফশোর ব্যাংকিং হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং ইউনিট। মূল ব্যাংকের সঙ্গে এর সংযোগ থাকে শুধু লাভ-লোকসানের হিসাবের ভিত্তিতে। ব্যবস্থাপনা, হিসাব, আমানত, ঋণ এসবই থাকে সম্পূর্ণ আলাদা। অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানত সংগ্রহ করা হয় বৈদেশিক মুদ্রায়, ঋণও দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। স্থানীয় মুদ্রায় কোনো কাজ হবে না। এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্পর্ক নেই বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একে নিবিড় তদারকির আওতার বাইরে রেখেছিল। বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার প্রচলিত নীতিমালার বিশেষ শিথিলতার সুযোগ নিয়ে বেআইনি তহবিল সংগ্রহ এবং ওইসব টাকা বেনামে পাচারের অভিযোগ উঠে। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ইউনিট পরিচালনায় নীতিমালায় ব্যাপক ছাড় দেয়া আছে। যে কারণে ইচ্ছে করলেও এর সব কার্যক্রম তদন্ত করা যায় না। তবে বর্তমানে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম তদন্তের সুযোগ রয়েছে।     একুশে সংবাদ ডট কম/আলম গীর হােসেন/ ১৩.০৯.২০১৫
Link copied!