মাত্র আঠারো মাসে ৬৬ বার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর উপক্রম!
একুশে সংবাদঃ গত ১৮ মাসে অন্তত ৬৬ বার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল দুই পরাশক্তি ! ইউরোপিয়ান লিডারশিপ নেটওয়ার্কের (ইএলএন) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার। উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সামরিক তথ্যের ভিত্তিতে গত জুলাই মাসে ইএলএন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সবচাইতে বড় শঙ্কাটি দেখা দিয়েছিল। সে সময় ইউক্রেন নিয়ে ন্যাটো ও রাশিয়া পরস্পরের মুখোমুখি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনে ন্যাটো ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল রাশিয়া। সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক অনুরোধ অনুমোদন করেছিল রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ।
আর এরপরই ইউক্রেনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিশ্বে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে। জাতিসংঘ ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সীমান্তে অবৈধভাবে সামরিক হেলিকপ্টার ও মালবহনকারী বিমান পাঠানোর অভিযোগ করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও সীমানার অখণ্ডতা ভঙ্গ করা হলে তা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটাবে।
ইউক্রেনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ওলেকজান্ডার তুর্চিনফ ক্রিমিয়ায় সেনা মোতায়েনের অভিযোগ তুলেছিলেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের কাছে তুর্চিনফের অভিযোগ ছিল, রাশিয়া ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় সেনা পাঠিয়ে যে আচরণ করেছিল, আবারও তারা একই আচরণ করছে।
ডেইলি স্টার জানায়, যুদ্ধশঙ্কার সাথে সাথে বাড়ছিল বিভিন্ন ধরণের কূটনৈতিক চাপ। বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কায় ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তেজনার পারদও চড়তে থাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বড় দুই সামরিক পরাশক্তিকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানায় বিভিন্ন বৈশ্বিক সংগঠন। এরপর ওবামার সাথে পুতিনের হটলাইনে যোগাযোগের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এসময় ইইউয়ের নেতারা উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখেন। ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধানদের একান্ত চেষ্টায় সেবারের অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়।
ইএলএন তখন জানিয়েছিল, ইউরোপের বিভিন্ন অন্যায্য হিসাব ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’-এর মতো একটি বড়মাপের যুদ্ধে ভূমিকা রাখবে। ডেইলি স্টার একে ব্যাখ্যা করে, রাশিয়াসহ কিছু দেশের উপর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ করে দেশগুলোকে বঞ্চিত করে রাখাকে। এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সুযোগ সুবিধার অসম বন্টনও যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের পক্ষ অবলম্বনের কারণ হতে পারে।
এরপর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়াকে তার সেনাবাহিনীকে ব্যাপকভাবে পুনর্গঠিত করতে দেখা গেছে। দেশটির সেনাবাহিনী নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী ডেইল স্টারের দাবি রাশিয়ার সেনাবাহিনী সম্মুখসমরের জন্য নিজেদের তৈরি করছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের সেনাবাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য বিস্ময়করভাবে চার হাজার ক্যাম্পে অংশ নিয়েছে- যেখানে ন্যাটোর সেনারা সাকুল্যে ২৭০টি সামরিক ক্যাম্পে অংশ নিয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার সমরাস্ত্র তৈরি ও আমদানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ।তৎপরতা দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর তরফেও। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আকার ছোট করার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও কিছু নির্দিষ্ট সেনা ছাড়া গত ছয় মাস এই কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে সামরিক প্রশিক্ষণ ও তৎপরতা।
এই সম্পর্কে গত মাসে ইএলএন জানিয়েছিল, ‘সেনাবাহিনীর মুখপাত্ররা হয়তো বলবে ‘কঠিন’ মিশনে সেনাবাহিনীকে অভ্যস্ত করতে ‘কাল্পনিক’ এই সেনা অভিযান । কিন্তু এটাই সত্যি- দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নিজেদের তৈরি করছে।’
ইএলএন আরো জানায়, ন্যাটো ও রাশিয়ান সেনাবাহিনী উভয়েই ‘প্রশিক্ষণের’ জন্য শত্রুপক্ষের পোশাক হিসেবে বেছে নিয়েছিল যথাক্রমে রাশিয়ান সেনাবাহিনী ও ন্যাটো বাহিনীর সামরিক পোশাক। এ ছাড়া ন্যাটোর সেনাদের সর্বোচ্চ সাবধান করে ক্রেমলিন সেনাবাহিনীর বরাদ্দও বাড়িয়েছে।
ন্যাটোর সেনাদের সতর্ক করে দিয়ে গত এক বছরে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সমরাস্ত্র এবং যুদ্ধযান বাড়িয়েছে রাশিয়া। এ ছাড়া গত এক বছরে রাশিয়ার ২৪৫টি আকাশযানকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে ফিরিয়েছে ন্যাটো বাহিনী। ‘শীতল যুদ্ধের’পর এই প্রথম রাশিয়ান বিমানবাহিনী সবচাইতে বেশি বার আকাশসীমা অতিক্রম করল।
কোনো অনুমোদন ছাড়া রাশিয়ার এই আন্তর্জাতিক আকাশসীমা অতিক্রমে নাখোশ যুক্তরাজ্যও। দেশটির সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ইএলএন জানায়, এই আকাশসীমা অতিক্রমের বিষয়টি নিয়ে কয়েকদফা রাশিয়ার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈঠক করেও কোনো ফল হয়নি।
একুশে সংবাদ ডট কম/ আলম গীর হােসনে/ ২৯.০৮.২০১৫
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :