দ্বীপ দেশে কাটুক ঈদের ছুটি
একুশে সংবাদ : ছুটি কাটানোর জন্য যারা একটু নিরিবিলি প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চান তারা মালদ্বীপ ঘুরে আসতে পারেন। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে এই দেশ। বহির্বিশ্বে দেশটি ‘মালদ্বীপ আইল্যান্ড’ বলে পরিচিত। কর্মময় জীবনের ব্যস্ততা সরিয়ে রেখে কয়েক দিনের ছুটি কাটাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন।
মালদ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম প্রবাল দ্বীপ দেশ। এখানকার সমুদ্রে ডুব দিয়ে উপভোগ করা যায় জলের নিচে প্রশান্তময় এক রঙিন দুনিয়া। জলের গভীরে পর্যটকদের সাদরে বরণ করে নিতে যেন প্রতীক্ষায় রয়েছে হাজারও প্রজাতির রং-বেরঙের মাছ, প্রাণী, উদ্ভিদ এবং প্রবাল। ফলে এই ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে চাইলে মালদ্বীপ হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। মালদ্বীপে গিয়ে আপনি কী দেখবেন একটু জেনে নেই।
উথিমু গান্দুভারু : প্রথমে শুরু করা যাক ঐতিহাসিক স্থান দিয়ে। দেশটির বিখ্যাত সুলতান মোহাম্মদ থানকুরুফান-এর নিবাস ছিল এখানে। তিনি তার প্রিয় স্বদেশ পর্তুগিজদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। ফলে তাকে জাতীয় বীর মনে করা হয়। এই ঐতিহাসিক জায়গাটি ভ্রমণ করলে জানা যাবে এবং আপনি দেখতে পাবেন তার বীরত্বের নিদর্শন।
বায়াধু আইল্যান্ড : দেশটির প্রশান্তময় দ্বীপ এটি। সর্বাপেক্ষা নিরিবিলি রিসোর্ট এই দ্বীপে অবস্থিত। এখানেই মিলবে মালদ্বীপের সর্বোত্তম প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই দ্বীপের গভীর জলে ডাইভ দেয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ৩৫টিরও অধিক ডাইভিং স্পট রয়েছে। এত ছোট্ট দ্বীপে এতগুলো ডাইভিং স্পট পৃথিবীতে বিরল। সুতরাং সেই বিরল সৌভাগ্যবানদের একজন হতে আপনিও সেখানে যেতে পারেন।
হুকুরু মস্ক : নামেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি মসজিদ। কিন্তু শুধু মসজিদ বললে ভুল হবে, এটি বিখ্যাত ‘ওল্ড ফ্রাইডে মসজিদ’ বলে খ্যাত। অর্থাৎ দেশটির সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ। ভেতরের কারুকার্য চমৎকার যা আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। এর দেয়াল প্রবাল পাথর দ্বারা নির্মিত। গায়ে খোদাই করা রয়েছে বিভিন্ন মনোহর নকশা। এর মধ্যে আরবি হস্তাক্ষরও রয়েছে। এগুলো দৃষ্টিনন্দন। একইসঙ্গে এটি একটি সমাধি ক্ষেত্র। এখানে চিরনিদ্রায় রয়েছে সুলতান, বীর ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজন। এই শান্ত, সুনিবিড় স্থানটিতে মালদ্বীপের ইসলামিক সংস্কৃতির সুন্দর ধারণা পাওয়া যাবে।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম : রাজধানী মালেতে অবস্থিত এই জাদুঘরটি পর্যটকদের অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত। এখানে মানবনির্মিত আদিম অনেক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো থেকে মালদ্বীপের অতীত ইতিহাসের পরিচ্ছন্ন একটি ধারণা পাওয়া যায়।
প্রবাল প্রাচীর : মালদ্বীপে গিয়ে আপনি যদি আরও ডাইভিং স্পটের খোঁজে থাকেন তাহলে যেতে হবে সমুদ্রের তলদেশের মন ভুলানো প্রবাল প্রাচীর দেখতে। সমুদ্রের তলদেশের কথা শুনে ভয় পাবেন না, এ জন্য আপনাকে শুধু প্রয়োজনীয় পোশাক এবং সরঞ্জামাদি শরীরে লাগিয়ে সমুদ্রে ডাইভ দিতে হবে। ব্যাস, এবার মন ভরে দেখতে থাকুন অপূর্ব সব দৃশ্য। এই এইচ.পি. রিফ মালদ্বীপের আকর্ষণীয় ডাইভিং স্পটগুলির মধ্যে একটি। এখানে পানির নিচে রঙিন মাছের প্রকাণ্ড একেকটি ঝাক দেখে অবাক না হয়ে উপায় থাকবে না। এর অবস্থান উত্তর মালেতে।
বানানা রিফ : সমুদ্র গর্ভে তিনশ মিটার দীর্ঘ প্রবাল প্রাচীর এটি। এর আকৃতি ঠিক কলার মতো তাই এমন নাম। এখানকার প্রধান আকর্ষণ সামুদ্রিক প্রাণী। চোখ ধাঁধানো নানা রং ও আকারের মাছের ঝাক দেখতে হলে সেখানে যেতে হবে। ভালো কথা, তার আগে এই তথ্যটুকু জেনে রাখুন, জায়গাটি বেশ ব্যয়বহুল।
আলীমাথা আইল্যান্ড : দ্বীপটি পূর্ব মালদ্বীপে অবস্থিত। এখানে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি আকর্ষণ রয়েছে। বিশ্বমানের ডাইভিং ব্যবস্থা তো আছেই, পাশাপাশি রয়েছে পানির নিচে অ্যাকুয়ারিয়াম। এখানকার সাদা বালির সৈকত নয়নাভিরামও বটে। দ্বীপে সবুজেরও কমতি নেই। যেন সাদা এবং সবুজের দারুণ এক চিত্রকর্ম।
সান আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা : মালদ্বীপের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই দ্বীপের সান আইল্যান্ড রিসোর্ট। এখানকার উপহ্রদ অর্থাৎ সাদা বালিবেষ্টিত ছোট ছোট নীল জলের সরোবরগুলোর সৌন্দর্য চোখ ও মন জুড়িয়ে দেয়। বর্তমানে এই রিসোর্টটি পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট থাকার জায়গা বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্লু টাইব মুফুসি : সামুদ্রিক জীবন উপভোগের শ্রেষ্ঠ জায়গা হলো মালদ্বীপ। ব্লু টাইব মুফুসি ডাইভিং সেন্টারে গেলে এ কথার সত্যতা মিলবে। তারা সেখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে তুলেছে নানা প্রকার জলজ বিনোদনের ব্যবস্থা। যেমন উইন্ড সার্ফিং, স্কুবা ডাইভিং, কায়াকিং ও প্যাডেল নৌকাসহ অনেক কিছু। এ ছাড়াও তিমি, হাঙ্গর, মান্তা রেজসহ বিরল প্রজাতীর সব মাছ দেখার সুব্যবস্থা তো রয়েছেই। অধিকন্তু কেউ যদি স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়, সে ব্যবস্থাও রয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য দেশের বেশ কয়েকটি টুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ অফার করেছে। তাদের মধ্যে যে কোনো একটির সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন। এয়ার টিকিট থেকে শুরু করে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ছেড়ে দিতে পারেন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।
একুশে সংবাদ/এম/ইয়াসমিন/০৭/০৭/১৫
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :