AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বন্য হাতি, হিংস্র মানুষ


Ekushey Sangbad

০৫:৪৬ পিএম, এপ্রিল ২২, ২০১৫
বন্য হাতি, হিংস্র মানুষ

 একুশেসংবাদ : সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ২০ বিএসএফ নিমতীতা ক্যাম্প এলাকার মোনহরপুর সীমান্ত পেরিয়ে পদ্মা নদীর চর দিয়ে একটি বন্য হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর পর দিনভর রামনাথপুর ও মোনহরপুর গ্রামের বিভিন্ন এলাকার ফসলী জমিতে গিয়ে বন্য হাতিটি ক্ষতি করে। বিজিবি সদস্যরা মশাল জ্বালানোসহ বিভিন্ন খোঁড়া উপায়ে হাতিটিকে ভারতের সীমান্তে পাঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা জনসাধারণের নিরাপত্তার অজুহাতে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে বিকেলে রামনাথপুর মাঠে থাকা হাতিটিকে গুলি করে হত্যা করেন। হাতিটির মন্দ কপাল বলতে হবে। কারণ, সে যে সীমানায় ঢুকে পড়েছে, সেখানে মানুষ যতটা না জীবপ্রেমে বিশ্বাসী, তারচেয়ে ঢের বেশী প্রাণীদের মানুষ বিনোদনের উপকরণ মনে করে। এ দেশে এখনো ষাড়ের (এঁড়ে) লড়াই বাধিয়ে গরুদের রক্তাক্ত করে জম্পেস মজা লোটে মানুষ, নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নির্বিচারে বাঘকে পিটিয়ে মারে, মোরগ লড়াই, বানর খেলা তো আছেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্তৃপক্ষের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। সেই অক্ষমতায় একটি হাতিকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে গুলি করে হত্যা করবে— তা আর অবাক হওয়ার কী! মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে- মানুষ বিবেক ও বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী আর অন্যান্য প্রাণীমাত্রই নির্বোধ। তাই মানুষকে তার বিবেক ও বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অন্য প্রাণীদের রক্ষা করে নিজের সক্ষমতার প্রতি সম্মান দেখাতে হয়। কিন্তু হাতি রক্ষার এই ক্ষেত্রে নিজেদের সম্মান করার যথেষ্ট ঘাটতি দেখা গেছে। বরঞ্চ বলা যায়, তারা সাধারণ ৮-১০টি প্রাণীর ন্যায় নির্বোধের মতো কাজ করেছে। কোনো একটি প্রাণী নির্দিষ্ট কোনো দেশের সম্পদ হলেও তার জাতীয়তার পরিচয় বড় নয়, পরিচয় আমরা দিলেও তারা তা ধারণ করার মতো বু্দ্ধিসম্পন্ন নয়। তাইতো হাতিটি সহজেই ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের উচিত ছিল তাকে ভিনদেশী উপদ্রব না ভেবে যে কোনো উপায়ে রক্ষা করা। তাকে মেহমান ও আমানত হিসেবেও দেখা যেত। তার জন্য ধৈর্য ধরে শেষ উপায় অবলম্বন করা অসম্ভব ছিল না, সময় নিয়ে বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করে হাতিটিকে ধরা যেত, চিড়িয়াখানার বিশেষজ্ঞ কিংবা হাতি রক্ষকদের খবর দেয়া যেত। তা ছাড়া ভারতের সীমান্ত কিংবা বন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সমীচীন ছিল। অধৈর্য হয়ে গুলি করে না মেরে অজ্ঞান করার ব্যবস্থাও করা যেত। এটা মনে আনা উচিত ছিল, হাতির ফসল মাড়িয়ে নষ্ট করা যুদ্ধবাজ মানুষের পরিকল্পনার মতো ভয়ঙ্কর কিছু নয়। তা ছাড়া অতবড় প্রাণী রক্ষার্থে আরও কিছু ফসল ক্ষতি হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত ছিল, অতবড় প্রাণী রক্ষার্থে সেটা বিরাট খরুচে ব্যাপার হতো না। প্রতিটি প্রাণী বিশ্ব প্রকৃতির সম্পদ। আধুনিক বিজ্ঞান তাদের শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেনি, আমাদের টিকে থাকার জন্যও তাদের টিকিয়ে রাখাটা জরুরাত দেখিয়েছে। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা একটি প্রাণী স্বভাবতই বন্য হবে, তারা মাঝেমধ্যে নির্বোধের মতো লোকালয়ে ঢুকে পড়বে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করা ও তার নিজ বাসস্থানে ফিরে যেতে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। সে জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি ও বন্দোবস্ত আমাদের রাখা উচিত। আমাদের বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সরকারের উপযুক্ত সঙ্গতি দিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে তৈরি রাখা উচিত। অতীব দুঃখের বিষয়, এখনো সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে মানুষ পিটিয়ে মারে। এমন নৃশংস পথে হাঁটা এ আধুনিক যুগে মানুষের মানায় না, যে কোনোভাবে ভিন্ন উপায়ে বন্যপ্রাণীদের বাঁচানোর সকল উপায় বনে ও লোকালয়ে থাকা উচিত। বহির্বিশ্বে যেখানে সচেতন মানুষ প্রাণী রক্ষার্থে গহীন বনে ঢুকে অসুস্থ ও অনাহারী প্রাণীদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, সেখানে দলছুট হয়ে কিংবা পথ ভুলে আমাদের দেশের লোকালয়ে যদি কোনো প্রাণী ঢুকে পড়ে তবে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে অথবা গুলি করে খুন করা হয়। আমাদের নিজেদের স্বার্থে হলেও প্রাণীদের রক্ষার্থে আরও সহনশীল, মানবিক ও সভ্য হয়ে উঠতে হবে।
একুশেসংবাদ.কম/এইচকেএস/২২.০৪.১৫।
Link copied!